প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

গৃহকর নিয়ে আপত্তি জানালে রিভিউ বোর্ডে নিষ্পত্তি করা হবে

সিলেট সিটি করপোরেশন গত ৩০ এপ্রিল নগরে নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। একলাফে ‘অসহনীয়ভাবে’ গৃহকর বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন ভবনমালিকেরা। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। এসব বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খানের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সুমনকুমার দাশ

প্রথম আলো:

নতুন গৃহকর নিয়ে মানুষ অসন্তোষ জানাচ্ছেন। একলাফে গৃহকর এত গুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?

মতিউর রহমান খান: ২০১৯-২০ সালে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শেষে ভবনগুলোর আয়তন ও ধরন অনুযায়ী নতুনভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন গৃহকরে আবাসিক ভবনের প্রতি বর্গফুট ৫ টাকা ও বাণিজ্যিক ভবনের প্রতি বর্গফুটের জন্য ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিটি ভবনের গৃহকর ধার্য হয়। সেই করারোপের তালিকাই ৩০ এপ্রিল প্রকাশ করেছে সিটি করপোরেশন। তবে এতে কারও আপত্তি থাকলে তাঁরা ১৪ মে পর্যন্ত আবেদন করে জানাতে পারবেন। আবেদন রিভিউ বোর্ডে শুনানির মাধ্যমে যৌক্তিকভাবে নিষ্পত্তি করা হবে। এরপরও রিভিউ বোর্ডের নিষ্পত্তির ওপর কারও আপত্তি থাকলে বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করার সুযোগ আছে।

প্রথম আলো:

কিন্তু ভবনমালিকদের অনেকের অভিযোগ, আপনাদের মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান যথাযথভাবে হয়নি। পুনর্মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেক আবাসিক কাঁচা কিংবা আধা পাকা ভবনের আয়তন ও ধরন আগের মতো থাকলেও গৃহকর ১০ থেকে ৫০ গুণ পর্যন্ত অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মতিউর রহমান খান: এমনটা হওয়ার কথা নয়। এরপরও যদি এমনটা হয়, তাহলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা সিটি করপোরেশন থেকে ‘ফরম-ডি’ সংগ্রহ করে আপত্তি দাখিল করতে পারবেন। রিভিউ বোর্ড এ বিষয়ের অবশ্যই গ্রহণযোগ্য সমাধান দেবে।

প্রথম আলো:

আগের বছরের চেয়ে কয়েক শ গুণ গৃহকর বেড়ে যাওয়ার উদাহরণ প্রথম আলোর হাতে রয়েছে...

মতিউর রহমান খান: বিষয়টা এমনও হতে পারে যে আগে সেখানে একতলা বা আধা পাকা ভবন ছিল, এখন সেখানেই বহুতল ভবন হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই গৃহকর বেড়েছে। তাই ঢালাওভাবে যেভাবে বলা হচ্ছে, কয়েক শ গুণ গৃহকর বেড়েছে, বিষয়টা আসলে তেমন নয়। এ ছাড়া আগে সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালার আলোকে গৃহকর আদায় হয়নি। অনেকে মেয়রের কাছে আবেদন করে গৃহকর অনেক কম দিতেন। তবে এবার গণপূর্ত অধিদপ্তরের ২০১১ সালের পরিপত্রের আলোকে গৃহকর ধার্য করা হয়েছে। তাই আগে তুলনামূলকভাবে কম গৃহকর দেওয়া অনেকে বর্তমান গৃহকরের সঙ্গে তুলনামূলক চিত্র নির্ধারণ করে এবার গৃহকর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রচার করছেন।

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

নতুন গৃহকরের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা করছেন। সবাই এ গৃহকর বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন। নাগরিকদের দাবির বিষয়টি আপনারা কীভাবে নিচ্ছেন?

মতিউর রহমান খান: এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া। আবারও বলছি, কারও আপত্তি কিংবা অসন্তুষ্টি থাকলে আপত্তির আবেদন পূরণ করে সিটি করপোরেশনে জমা দিতে পারবেন। অবশ্যই এর গ্রহণযোগ্য সমাধান মিলবে। রিভিউ বোর্ডের সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে আপিল বোর্ডে যাওয়ারও সুযোগ আছে।