বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভের পর পঞ্চগড় জেলা জজসহ চার বিচারককে বদলি
অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের পর পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারককে বদলি করা হয়েছে। তাঁদের সংযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে আইন ও বিচার বিভাগে বদলি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) এ এফ এম গোলজার রহমান রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই বদলির আদেশে তথ্য জানান।
বদলি হওয়া চার বিচারক হলেন পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুহেনা সিদ্দিকী।
অপর একটি প্রজ্ঞাপনে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুজ্জামানকে পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এদিকে চারজন বিচারকের অপসারণ দাবি করে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও বিচারকদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাকে দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে উল্লেখ করেছে অধস্তন আদালতের বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গতকাল বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিচার বিভাগের সংস্কার যখন চলমান, ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা লক্ষ করেছি, যা একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
এর আগে নিয়োগ-বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হুমকির অভিযোগে গত রোববার বেলা সোয়া ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে আদালত ঘেরাও, মূল ফটকে তালা দেওয়া ও মহাসড়ক অবরোধ করে পঞ্চগড় জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে সড়কে চলাচলকারীরা ও আদালতে আসা লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
ওই দিন রাত আটটার কিছু আগে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী ঘটনাস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আইন মন্ত্রণালয়ে সারসংক্ষেপ হয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। সিদ্ধান্ত হলো অভিযোগ ওঠা চারজন বিচারক সোমবার থেকে পঞ্চগড় আদালতে কোনো বিচারকাজ করবেন না এবং তাঁরা এখান থেকে চলে যাবেন।’
জেলা প্রশাসকের এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আনন্দমিছিল করতে করতে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তারও দাবি জানান। এ ঘটনার পরদিন থেকে ওই চার বিচারক আর আদালতে বসেননি। তাঁরা চারজনই ছুটিতে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জমিরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচারকদের বদলির বিষয়টি শুনেছি।’