গোদাগাড়ীতে সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে নৌকায় ভোট চেয়ে শপথ
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় এক মতবিনিময় সভায় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর উপস্থিতিতে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে হাত তুলে উপস্থিত সবাইকে শপথ করানো হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে সদর ইউনিয়নের আইহাই উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ওই সভা হয়।
ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। এর আগে বৃহস্পতিবার তানোর উপজেলার একটি ইউনিয়নের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে মতবিনিময় সভা করেন ওমর ফারুক চৌধুরী। সভায় সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগীর পাশাপাশি ওই ইউনিয়নের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় এলাকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংসদ সদস্য নৌকার পক্ষে ভোট চান । ফারুক চৌধুরী (Faruk Chowdhury) নামে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারও করেন তিনি।
এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার ১৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করতে পারবেন না।
আচরণবিধি ভঙ্গের ব্যাপারে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি আইনের ছাত্র। নির্বাচনী আচরণবিধি পড়ে দেখেছেন, তিনি কোথাও আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন না। প্রার্থী না হওয়ার পর্যন্ত তিনি নির্বাচন কমিশনের অধীনে নন।
আজ সকালে ওই সভায় ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আজকে আমি আর আপনাদের কাছে ভোট চাইব না। যেখানেই যাচ্ছি, অনেক লোকজনের সমাগম হচ্ছে। প্রতিপক্ষের লোকজনের সহ্য হচ্ছে না। অনেক রকম কথাবার্তা হচ্ছে। তাই আমি আজ আর ভোট চাইব না। আমি আপনাদের সঙ্গে কিছু গল্প করব। গল্প শুনলেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে আমি কী বলতে চাচ্ছি।’ এরপর তিনি উপস্থিত দর্শকদের মা-বাবারা বলে সম্বোধন করে জানতে চান বিএনপি-জামায়াতের আমলে তাঁরা ভালো ছিলেন, না এখন বেশি ভালো আছেন? তিনি বলেন, ওই সময় ৩ মাসে ১৫০ টাকা কেজির এক কেজি গরুর মাংস খেতে পারেননি। এখন ৮০০ টাকা কেজির মাংস মাসে দুইবার খেতে পারেন। এর জাদুটা কি? তিনি সেই জাদুর গল্প বলবেন। এ সময় তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সুবিধাভোগীরা কী পরিমাণ সুবিধা পেয়েছেন তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সংসদ সদস্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার মায়েরা যাঁরা এই কাজে যান, তাঁরা গাছের ছায়ায় বসে একজন অন্যের মাথার উকুন বাছেন। আর ছেলেরা বসে “বাঘ-বকরি” খেলেন। তারপর কোদালটা ঘাড়ে নিয়ে আবার বাড়ি চলে যান। এর মধ্যে আবার “ভিআইপি লেবার” আছেন। ভিআইপি লেবার তো ভিআইপিই। তাঁরা মাঠেই যান না। তাঁরা মেম্বার সাহেবের আত্মীয়, চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয়।’
সংসদ সদস্যের বক্তব্যের আগে গোদাগাড়ী ইউপির চেয়ারম্যান মাসুদুল গনি বলেন, ‘আজকে জুমার দিন। আগামীতে দিনে নির্বাচন আসতেছে। ভালো থাকার জন্য আমাদের সবাইকে নৌকার সঙ্গে থাকতে হবে। পাশাপাশি আমাদের যে নেতা, আমাদের সংসদ সদস্য, যিনি আমাদের চালান, আলহাজ ওমর ফারুক চৌধুরীকে আগামী দিনে নৌকায় ভোট দেবেন। দেবেন তো? আজ শুক্রবার, বলেন দেবেন? কথা বলেন, হাত তোলেন। নাহ্! হাত তো বেশি ওঠে না দেখি। একটু পরে বিরিয়ানি-মাংস খাওয়াব। সবাই হাত তোলেন দেখি।’ এ সময় অনেকেই দুই হাত উঁচু করেন। এবার চেয়ারম্যান বলেন, ‘যা–ই হোক চলবে, আলহামদুলিল্লাহ।’
এদিকে, আগামীকাল শনিবার তানোরের গোল্লাপাড়ায় একই ধরনের মতবিনিময় সভার জন্য আজ ওই এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। সেখানে সরকারি ভাতাভোগীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন (বৃহস্পতিবারে সংসদ সদস্যের মতবিনিময় সভার বিষয়ে) পেয়েছেন। তাতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ওই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে।