ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবীর হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি

ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মিছিল। আজ বেলা দুইটায় চট্টগ্রাম নগরের ওয়াসা মোড়েছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের ফাঁসি ও ইসকনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা। আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে এই দাবি জানান তাঁরা।

‘আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে ইসকনকে নিষিদ্ধ ও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে’ হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রাম মহানগর এই কর্মসূচির আয়োজন করে। আজ জুমার নামাজের পর একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদের সামনে থেকে বের হয়ে ষোলোশহর ২ নম্বর গেট এলাকায় শেষ হয়। সেখানে সমাবেশে বক্তব্য দেন হেফাজতের নেতারা।

সমাবেশ থেকে আগামী সোমবার চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এদিকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হাটহাজারীতেও ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

হেফাজতের নেতারা বলেন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম ও ইসকনের মদদে আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত যেসব আসামি এখনো ধরা পড়েননি, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হারুন বিন ইজাহার। ইসকন সব ইসলামি দলের সঙ্গে বসতে চাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে বসব না। আমাদের তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এক হচ্ছে এ সমস্ত হিন্দু সংগঠনকে ভারতের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। দুই হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের যে গুজব, প্রপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে সেটি তাদের পরিষ্কার করতে হবে। তাদের বলতে হবে, বাংলাদেশে হিন্দুরা মুসলমানদের পাশাপাশি থেকে সহাবস্থানে নিরাপদে রয়েছে এবং ভারতীয় মিডিয়ার চালানো সংবাদ মিথ্যা, ভুয়া, অপপ্রচার। তিন হচ্ছে আপনাদের বিভিন্ন সংগঠনে যেসব সন্ত্রাসী ঘাপটি মেরে রয়েছে, তাদের আপনারাই চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করুন। এগুলো মানলে আমরা আপনাদের সঙ্গে ডায়ালগে (সংলাপ) বসব।’

হারুন ইজাহার বলেন, ‘আমাদের মূল লড়াই এসব সংগঠনের সঙ্গে নয়। আমাদের মূল লড়াই দিল্লির সঙ্গে। আমি বলেছি, সাপের লেজ বাংলাদেশে হলেও মাথা দিল্লিতে। দিল্লি বিগত ১৬ বছর স্বৈরাচার হাসিনাকে আমাদের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চাপিয়ে দিয়েছে। হিন্দুস্তান আমাদের জাতীয় নেতাদের যুদ্ধাপরাধের নামে ফাঁসির মঞ্চে পাঠিয়েছে। হিন্দুস্তান আমাদের ওপর শিক্ষা, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়সহ সব ধরনের আগ্রাসন চালিয়েছে। তারা যদি বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠীকে লেলিয়ে দিয়ে আমাদের দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে আমরাও আমাদের যুদ্ধ অব্যাহত রাখব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা তৌহিদি জনতার পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধিদল ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনকে স্মারকলিপি দেব।’

তবে কী বিষয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে হারুন ইজাহার তাঁর বক্তব্যে কিছু বলেননি।

সমাবেশে ইসকন নিষিদ্ধের এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে হেফাজতে ইসলামের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী বলেন, ইসকনকে এক সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা না হলে লংমার্চসহ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা আলী ওসমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনীর, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা মো. সানি, আবদুল্লাহ নোমান, খেলাফতে মজলিসের চট্টগ্রামের সভাপতি মাওলানা এমদাদ উল্লাহ, সহসাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।