একদলীয় ব্যবস্থা কায়েম করতে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে: জি এম কাদের
গণতন্ত্রের আবরণে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য নাম পাল্টে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শনিবার বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জি এম কাদের বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার নিরাপত্তা আইন একই; শুধু নামের পরিবর্তন। এটা করা হয়েছে জাতির সঙ্গে তামাশা করে, যাতে দেশে গণতন্ত্রের আবরণে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করা যায়। সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য যাতে কেউ সমালোচনা করতে না পারেন, বিরোধিতা করতে না পারেন। অথচ গণতন্ত্রের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দ্বিমত বা বিরোধিতা করার অধিকার নিশ্চিত করা
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ডিজিটাল বা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য দেশের মানুষের বাক্স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা নষ্ট করা। দেশের মালিককে সরকারের ভালো-মন্দ নিয়ে কথা বলতে না দেওয়া, বললে আইনি শাস্তি নিশ্চিত করা, এগুলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অনুকূলে যায় না। দেশের সচেতন মানুষ, সুধীজন এমনকি বিদেশের গুণীজনেরাও এসব কথা বলছেন। এই আইনের মাধ্যমে একটি একপক্ষীয় রাষ্ট্র, সমাজ কায়েমের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তো দেশ স্বাধীন হয়নি। দেশে ভবিষ্যতে কী হতে পারে, সে বিষয়ে মানুষকে ধারণা দিতে জাতীয় পার্টি এসব কথা বলে আসছে, যাতে মানুষ জানতে পারে, বুঝতে পারে।
লালমনিরহাট-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য জি এম কাদের আরও বলেন, বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগের। তাই এই সরকারের আমলে সব ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা কেবল যাঁরা আওয়ামী লীগ করেন, তাঁদের জন্য। যত যোগ্যতাই থাকুক না কেন, আওয়ামী লীগ না করলে চাকরি জুটবে না, লেখাপড়া শিখেও বেকার থাকতে হবে। এখন জনগণের পক্ষে কথা বললে তাঁকে সরকারবিরোধী মনে করা হয়। এখন সরকারের সমালোচনা বা কোনো কাজের বিরোধিতাকে সরকারবিরোধী মনে করা হয়। অথচ সরকারের সমালোচনা আর রাষ্ট্রের সমালোচনা এক নয়।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা ব্রিটিশ আমলে বা পাকিস্তান আমলে বৈষম্যের বিরোধিতা করেছেন। এখন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মানুষকে সেই একই ধরনের বৈষম্যের বিরোধিতা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার ছিল, তা এই সরকার আমলে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বাঁচতে হলে দেশের মানুষকে জাতীয় পার্টির পতাকাতলে সমবেত হতে হবে।’
সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, পনির উদ্দিন আহমেদ, আহসান আদেলুর রহমান। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে জাপা চেয়ারম্যানের সম্মতিক্রমে লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. জাহিদ হাসানের নাম ঘোষণা করেন মুজিবুল হক চুন্নু।
মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে জোট করব না, আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেব। জনগণ চাইলে আমরা ক্ষমতায় যাব ইনশা আল্লাহ।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এক দফা সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, দল আবার ক্ষমতায় যাবে। বিএনপির এক দফা এই সরকারের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাওয়া। দুই দলের লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষমতার সঙ্গে থাকা। আর জাতীয় পার্টি চায়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।