১৬ বছরে দলীয় প্রভাবে আমরা হেন অন্যায় নাই করি নাই: সিলেটে আইজিপি
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘গত ১৬ বছরে দলীয়ভাবে প্রভাব এত আসছে যে, আমরা হেন অন্যায় নাই করি নাই। এটা আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। এটার জন্য আমরা অত্যন্ত দুঃখিত, অত্যন্ত লজ্জিত।’
শনিবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আইজিপি এ কথাগুলো বলেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বিভাগ যাতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকে এমনটি পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে দাবি করা হয়েছে। পুলিশে রাজনৈতিক কুপ্রভাব যেন না আসে, সুপ্রভাব আসে।’
পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো পুলিশ এমন নির্মম আচরণ করেনি মন্তব্য করে বাহারুল আলম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে সেই রিয়েলাইজেশনটা আসে যখন এসব চিত্র দেখি, যেসব ঘটনা আমরা ঘটিয়েছি, আমার মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো পুলিশ এ রকম করেনি। সেনাবাহিনী হয়তো যুদ্ধ করতে গিয়ে...পুলিশ এত নির্মম হতে পারে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধারণা করতে পারিনি। আমরা ওই জায়গা থেকে বের করে আনার জন্য, ওইটা তারা কেন করতে গেলেন, এ রকম দলীয় কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তাদের এভাবে আদেশ দেওয়া হলো। ভূমিকাটা এ রকম হয়ে গেল যে, মানুষের প্রাণ সংহার করা। আমরা আগে কাউকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে একটা মামলা দিয়ে ভেতরে রেখে দিয়েছি। কিন্তু একেবারে গুলি করে মেরে ফেলা! ফর দিস রিজন! এটার জন্য আমার কাছে কোনো জবাবই নাই। এই পর্যায়ে আমরা চলে গেছি, এটা থেকে উত্তরণটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
বাহারুল আলম বলেন, কষ্টকর একটা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছে। শুধু পুলিশ নয়, সমাজের লোকের মধ্যেও একই অবস্থা হয়েছে। পুলিশের প্রতি ঘৃণা এত বেশি পুঞ্জীভূত হয়েছে যে মানুষ নিতে পারছিল না। এ জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা শুনছেন।
আইজিপি আরও বলেন, সমাজের কিছু অসাধু লোক, নেতা এবং প্রভাবশালীরা নিরীহ লোকদের মামলার আসামি করছে, এটি উদ্বেগের বিষয়। তবে তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে কোনো নিরীহ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাঁদের হয়রানি করা না হয়। এর মধ্যে যাঁরা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, তাঁদের আশ্বস্ত করার জন্যও বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে ফোন দিয়ে নিরীহ লোকদের বলা, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে না, হয়রানি করা হবে না।
মামলা বন্ধ করার আইন পুলিশের হাতে নেই মন্তব্য করে আইজিপি বলেন, ‘আন্দোলন–সংগ্রামে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁর পিতা কিংবা আত্মীয়কে প্রভাবান্বিত করে সমাজের কিছু অসাধু লোক ১০ জনের জায়গায় ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করছেন। এখন আইনে যেটা আছে, কেউ যদি মামলা করে তাঁকে আমরা বন্ধ করতে পারি না। আমাদের যে প্রচলিত আইন সেটাতে আমরা বলতে পারি না যে আপনি তের শ কেন দিয়েছেন, তিনজনকে দেন। এটা আইনত বলা যায় না। আইন আসলে আমাকে সেই ক্ষমতা দেয়নি।’
অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের বিষয়ে গণমাধ্যমের সাহায্য চেয়ে বাহারুল আলম বলেন, সারা দেশে এখনো প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। মাটি খুঁড়ে অস্ত্র বের করা কঠিন। পুলিশ যদি সমাজের লোকের উপকার করতে পারে তখন তারাই অস্ত্রের সন্ধান দেবেন। তখনই অস্ত্রগুলো বেরিয়ে আসবে। এ জন্য গোয়েন্দা লাগিয়ে মাটি খুঁড়ে বের করতে হবে না। ওই জায়গা হচ্ছে সব থেকে সহজ। মানুষজনের মধ্যে কেউ না কেউ দেখে বা জানে। সে ক্ষেত্রে মানুষজন থানায় গিয়ে যে তথ্য দেবে এমন কনফিডেন্স এখনো তৈরি হয়নি। মানুষের আস্থা অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত। তবে পুলিশের রুটিন কাজ চলবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।
মতবিনিময় সভায় আইজিপি ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত সংবাদকর্মীর বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মামলা গুরুত্বের সঙ্গে দেখার জন্য সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলাটির ব্যাপারে তিনি চোখ রাখবেন বলেও জানান। এ সময় সিলেটের রেঞ্জ ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সিলেট রেঞ্জের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আইজিপি।