সড়ক নির্মাণের ছয় মাসেই ভারী যান চলাচল বন্ধ, কাজে আসছে না ১২৮ কোটির সেতুও

ভারী যান চলাচল বন্ধ রাখতে সড়কে প্রতিবন্ধক খুঁটি বসানো হয়েছে। রোববার লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্রেশ্বর এলাকায়ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরে ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১১ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের ছয় মাস না যেতেই ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্মাণের পর সড়কটি দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পাথরসহ পণ্য বহনকারী ভারী ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস যেতে না যেতেই বিভিন্ন জায়গা ধসে পড়ে। এমন অবস্থায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলো। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিন্তা নদীর ওপর প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুও কাজে আসছে না।

রংপুর নগরের বুড়িরহাট থেকে গঙ্গাচড়ার শংকরদহের সিরাজুল বাজার পর্যন্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ কিলোমিটার। এই সড়কের শেখ হাসিনা সেতুর উত্তর প্রান্তে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর এলাকায় সংযোগ সড়কে আড়াআড়িভাবে লোহার পাইপ দিয়ে তৈরি একটি প্রতিবন্ধক দেওয়া হয়েছে। ফলে সড়কে কোনো বাস, ট্রাক চলাচল করতে পারছে না। তবে পিকআপ, কার, মাইক্রোবাস কোনোরকমে চলাচল করছে।

আরও পড়ুন

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার আলম প্রথম আলোকে বলেন, পাথরবাহী ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়নি। পরিকল্পনায় ভুল ছিল। ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখতে আবারও সেতুর উত্তর প্রান্তে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবন্ধক খুঁটি বসানো হয়েছে। ফলে বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ। চলাচলের উপযোগী আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ না করা পর্যন্ত এই প্রতিবন্ধক রাখতে হবে। না হলে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলে সড়ক পুরোদমে ভেঙে পড়বে।

বৃষ্টির পানির তোড়ে মহাসড়কের এক পাশের মাটি ও ইট সরে গেছে। যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। গত জুনে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রায় ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর নভেম্বর মাসে কাজ শুরু হয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসে এই সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হয়। দরপত্র অনুযায়ী এই মহাসড়কের কার্পেটিং করা পাকা সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত। এই ১৮ ফুট সড়ক ছাড়াও দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট ইটবিছানো এবং ৩ ফুট করে দুই পাশে ৬ ফুট মাটি বিছানোসহ ১২ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। পাথরবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করায় চাপ নিতে পারছে না বলে কিছু কিছু স্থানে সড়কের দুই পাশে ইট–মাটি ধসে পড়ে।

সড়কটির অবস্থা নিয়ে গত ৩ জুন প্রথম আলোয় ‘২৮ কোটি টাকায় সংস্কারের তিন মাসেই সড়কে ধস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন

লালমনিরহাট এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে গঙ্গচড়ায় তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর উদ্বোধন করেন। ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি পরে নামকরণ করা হয় শেখ হাসিনা সেতু।

আমদানিকারক ব্যবসায়ীসহ মানুষের ভাষ্য, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক আবারও লালমনিহাট জেলা সদর ঘুরে রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে করে ৫০ কিলোমিটার দূরের পথ ঘুরতে হচ্ছে। রংপুর থেকে লালমনিরহাট শহর হয়ে বুড়িমারীর দূরত্ব প্রায় ১৪০ কিলোমিটার। গঙ্গাচড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে এই পথ হলো প্রায় ৯০ কিলোমিটার।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে লালমনিরহাট হয়ে রংপুর আসতে ট্রাকপ্রতি ভাড়া পড়ে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। সেখানে গঙ্গাচড়ায় শেখ হাসিনা সেতুর ওপর দিয়ে ভাড়া পড়ত ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা।

রংপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও আমদানিকারক মনজুর আহমেদ বলেন, সঠিক পরিকল্পনা না করে আঞ্চলিক মহাসড়কে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হলো। এই টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু সেই সড়কে ১৪ ও ১৬ চাকার প্রায় ৪০ টন ওজনের পাথর বহনকারী ট্রাক চলাচল শুরু করতে না করতেই ভেঙে পড়া শুরু করল। এর ফলে এই সেতুটি নির্মাণের উদ্দেশ্য সফল হলো না।

আরও পড়ুন