সিলেট নগরের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি এলাকা হচ্ছে বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টা। এসব এলাকায় প্রধান সড়কের একাংশ ও দুই পাশের ফুটপাত সপ্তাহ তিনেক আগেও ছিল হকারদের দখলে। প্রতিদিনই হাজারো হকার নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে বসতেন। এতে যানজট হতো, পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারতেন না। অবশেষে ভোগান্তির অবসান হয়েছে। ফুটপাত এখন হকারমুক্ত। ফলে নগরবাসী স্বস্তিতে চলাচল করতে পারছেন।
নির্বাচিত হওয়ার পরপরই সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী হকারদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পাশের লালদীঘিরপাড় এলাকায় প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে অস্থায়ী বিপণিবিতান (মার্কেট) নির্মাণ করা হয়। সেখানে মাটি ভরাট, ইটের সলিং, বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থাসহ সব কাজ শেষে গত ১০ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্থানটি হকারদের ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ বিপণিবিতানে প্রায় তিন হাজার হকার একসঙ্গে বসে ব্যবসা করতে পারবেন বলে সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার হকার অস্থায়ী মার্কেটে ব্যবসা করছেন।
গত রোববার বিকেল ও সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটপাত হকারমুক্ত থাকায় ভোগান্তি ও যানজট কমেছে। ফাঁকা ফুটপাত দিয়ে অনেকটা স্বস্তি নিয়ে নগরবাসী চলাফেরা করছেন। নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, সুরমা মার্কেট, জেলরোড, নয়াসড়ক, ধোপাদিঘিরপাড়, তালতলা, লামাবাজার, রিকাবীবাজার ও আম্বরখানা এলাকায় অন্যান্য সময়ের মতো হকার দেখা যায়নি। তবে হকারমুক্ত সড়কের কিছু কিছু অংশে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের যাত্রী ওঠানামা করতে দেখতে গেছে।
যোগাযোগ করলে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেয়র হকারমুক্ত নগর গড়তে উদ্যোগ নেন। হকারদের পুনর্বাসনের পর প্রায় প্রতিদিনই নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কোনো হকারকে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ব্যবসা পরিচালনা করতে দেওয়া হচ্ছে না। যাঁরা করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের জরিমানা করার পাশাপাশি সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এতে সুফল এসেছে। এখন প্রায় সব হকার পুনর্বাসন করা স্থানে এসে ব্যবসা করছেন।
নগরের একাধিক বাসিন্দা বলেছেন, বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার হকার পণ্য নিয়ে ফুটপাতে বসতেন। ফলে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলাচল করা যেত না। এ অবস্থায় মানুষজন মূল সড়ক দিয়ে হাঁটতেন। এ ছাড়া হকাররা সড়কের একাংশ দখল করে রাখায় যান চলাচলেও সমস্যা হতো। একই সঙ্গে অসহনীয় যানজটও লেগে থাকত। নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর করতে অতীতেও হকারদের ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হয়। তবে কিছুদিন পরই তাঁরা আবার ফুটপাত দখল করে নিতেন। এবার পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, হকাররা আবার ফুটপাত দখল করতে পারবেন না।
ফুটপাত দখলমুক্ত করে নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর করায় বিষয়টি খুবই প্রশংসনীয় বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব। তিনি বলেন, সিলেট নগরে প্রশস্ত ফুটপাত থাকলেও হকারদের কারণে নির্বিঘ্নে চলাচল করা যেত না। আগেও অনেকবার ফুটপাত দখলমুক্ত হয়েছে। তবে কিছুদিন পর পুনরায় ফুটপাত বেদখল হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়ে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। ফুটপাত পুনরায় যেন দখল না হয়, এটা কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখতে হবে।
গত রোববার বিকেলে হকারদের অস্থায়ী বিপণিবিতানে গিয়ে দেখা গেছে, সার বেঁধে বসে হকাররা ব্যবসা করছেন। সবজি, মাছ, কাপড়, জুতা, প্রসাধনসামগ্রী থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য এখানে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও দরদাম করে সেসব পণ্য কিনছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নেতা আবদুর রকিব বলেন, স্থায়ী পুনর্বাসন হওয়ায় হকাররা খুশি। শুরুতেই যেমন বেচাকেনা হচ্ছে, সেটা নিয়ে তাঁরা আশাবাদী। মানুষজন আসছেন। মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন, মার্কেটটিকে জনপ্রিয় করার জন্য যত ধরনের প্রচার–প্রচারণা ও উদ্যোগ প্রয়োজন, নেওয়া হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, নগরের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা। নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর করার পাশাপাশি সুষ্ঠু চলাচল নিশ্চিত করতেই ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেহেতু হকারদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে, তাই এসব হকার আর ফুটপাত দখল করতে আসবেন না। এর মধ্য দিয়ে নগরের দীর্ঘদিনের একটা সমস্যা দূর হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। বিষয়টি তাঁরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখবেন বলে জানান।