‘কাজ নেই, কী করে চইলব’

চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ পাচ্ছেন না। ঢালি, কোদাল, সাইকেল নিয়ে তাঁদের অপেক্ষা। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নগরের তালাইমারী এলাকায়ছবি: শফিকুল ইসলাম

রাজশাহীর পবা উপজেলার কাপাসিয়া এলাকা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের তালাইমারী মোড়ে এসেছেন মো. ইব্রাহীম। একটি সাইকেল, তাতে বাঁধা আছে একটি কোদাল ও ঢালি। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত তিনি কোনো কাজ পাননি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দুইটে ছেলে মিলে সংসারে চার সদস্য। চাষের জমিজমা নেই। শীতের সময়ে ইটের ভাটায় কাজ কইরে খাই। আর এখন শহরে কাজে এসেচ্ছি। কারফিউতে কাজ নেই, কী করে চইলব? দোকানে ধারদেনা পড়ে গেছে।’

ইব্রাহীমের মতো একই জায়গায় শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের আবু বক্কর। গত এক সপ্তাহের মধ্যে ছয় দিন রাজশাহী শহরে কাজে এসেছেন। দুই দিন মাত্র কাজ পেয়েছেন। তাঁর ভাষায়, গ্রামে কাজ নেই। শহরে এলে কাজ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন কারফিউর কারণে কাজ নেই বললেই চলে। এভাবে চলা মুশকিল। রাজশাহীতে তো তেমন সংঘর্ষ হয়নি। কারফিউ তুলে দেওয়া যায় না কি—প্রশ্ন ইব্রাহীমের।

বানেশ্বর থেকে আসা রায়হান আলী বলেন, বৃষ্টি হলে আমন ধান রোপণের কাজ পাওয়া যেত। কিন্তু বৃষ্টি নেই। মাঠ চৌচির হয়ে আছে। গ্রামে কোনো কাজকর্ম নেই। শহরের কাজ ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো না হলে কাজ পাবেন না বলে তাঁর শঙ্কা।

চলমান পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী মানুষেরা কাজ পাচ্ছেন না। কেউ কাজে নিতে এলে ঘিরে ধরছেন তাঁকে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নগরের তালাইমারী এলাকায়
ছবি: শফিকুল ইসলাম

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার ১৯ জুলাই রাত থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করেছে। সারা দেশের মতো রাজশাহীতে কারফিউ জারি করা হলে শহর একরকম ফাঁকা হয়ে যায়। সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি শহরে ঢুকতেও নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। কয়েক দিন ধরে কারফিউ কিছুটা শিথিল করলেও কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসেনি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা।

শহরের তালাইমারী মোড়ের মতো নগরের বিনোদপুর, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় শ্রমজীবীরা শ্রম বিক্রি করতে আসেন। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম থেকে কাকডাকা ভোরে শ্রমজীবী মানুষেরা আসেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁদের কেউ কাজ পান, কেউ–বা কাজ না পেয়ে চলে যান। কারফিউ থাকায় কাজ না পাওয়া মানুষের তালিকা বাড়ছে।

আজ সকাল আটটার দিকে সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের তালাইমারী মোড়ে কমপক্ষে দেড় শ শ্রমজীবী মানুষ কাজের অপেক্ষায় ছিলেন। সেখানে সকাল আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত মাত্র ছয়জন শ্রমিককে কাজ পেতে দেখা গেছে। সেখানে শ্রমিক নেওয়ার মতো কেউ এলেই শ্রমিকেরা তাঁদের ঘিরে ধরছেন। নগরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরেও শ্রমিকদের কাজের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।

শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে কথা হয় পবার পারিলা ইউনিয়নের আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি এ জায়গায় গত সপ্তাহে কাজ করতে পাঁচ দিন এসেছেন। কাজ পেয়েছেন গতকাল বৃহস্পতিবার শুধু। ভোর থেকে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কোনো কাজ পাননি। এখানে আসা কেউই কাজ পাননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দেশের যত পরিস্থিতিই আসুক না কেন, তাঁদের মতো শ্রমজীবী মানুষেরাই বিপদে পড়েন। তাই দেশ নিয়ে ভাবনাটা তাঁদেরই বেশি। এখন যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে মনে হচ্ছে সামনে আরও বিপদে পড়তে হবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেছেন, কারফিউয়ে শ্রমজীবী মানুষদের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি মাথায় রেখে তাঁরা ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল করছেন।