কুষ্টিয়ায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ তরুণের মামলায় আসামি বিএনপির ২ নেতা
কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক তরুণের করা মামলায় বিএনপির দুজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। আসামি হওয়া বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, এলাকায় বিরোধের কারণে আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের নামের সঙ্গে তাঁদের নাম এজাহারে ঢোকানো হয়েছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের হাটশ হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা ওমর মালিথার ছেলে ইয়ামিন আলী (২১) গত বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এই মামলা করেন। মামলায় ৬৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। রোববার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নাম আছে। আসামির তালিকায় আরও নাম আছে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলীর।
বিএনপি নেতা আতিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গণ-অভ্যুত্থানে মাঠে ছিলাম। অথচ আমাদের নামেই মামলা করা হয়েছে। দলের মধ্যে প্রতিহিংসার কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় আমাদের কোণঠাসা করতেই এমন নোংরামি করা হয়েছে। আমরা দলের শীর্ষ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের বলেছেন মামলা থেকে আমাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’
বাদী ইয়ামিন আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি। মামলায় বিএনপি নেতাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো সমস্যা নেই। তিনি মামলা তুলে নেবেন। কোনো মামলায় রাখবেন না।
কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা এই মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র-জনতা। আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন। গত ৪ আগস্ট বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন মসজিদের দক্ষিণ পাশের সড়কের ওপর পৌঁছালে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সজ্জিত অবস্থায় ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করেন।
আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আসামিরা শটগান থেকে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ সময় আন্দোলনের সম্মুখ ভাগে থাকা ইয়ামিনের ডান চোখে দুটি ও মুখের ডান দিকে পাঁচটি গুলিসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৮টি গুলি লাগে। এ ঘটনার ৪ মাস ২২ দিন পর ২৬ ডিসেম্বর ইয়ামিন আলী বাদী হয়ে ৬৭ জনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এই হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেহাবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ইয়ামিন নামে একজন মামলা করেছেন। মামলাটি একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। নিরপরাধ কাউকে মামলায় জড়ানো হবে না। সঠিকভাবে তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে কারও সম্পৃক্ততা না পেলে নাম বাদ দেওয়া হবে।