৩০০টি ছররা গুলি শরীরে নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মজিদ
শরীরে অন্তত ৩০০টি ছররা গুলির চিহ্ন। গুলিগুলো শরীরের ভেতরে চামড়ার নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এসব গুলির যন্ত্রণায় ছটফট করে দিনাতিপাত করছেন আবদুল মজিদ (২২)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। গত ৪ আগস্ট বিকেলে বগুড়ার শেরপুর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। তাঁর শরীর থেকে ১৪টি ছররা গুলি অস্ত্রোপচার করে বের করা হলেও বাকিগুলো রয়ে গেছে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ছররা গুলিতে আবদুল মজিদের শরীরের বাঁ পাশে অবশ হয়ে গেছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে তাঁর উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য আর্থিক সামর্থ্য মজিদের পরিবারের নেই। মজিদ আগে দিনমজুরি করে চলতেন। শারীরিক অবস্থার কারণে এখন সে কাজও করতে পারছেন না।
শেরপুর পৌর শহরের খেজুরতলা এলাকায় দুই কক্ষের একটি টিনশেড ভাড়া বাড়িতে আবদুল মজিদের পরিবার বসবাস করে। তাঁর মা দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। বড় ভাই রাকিব শেখ (২৬) দৈনিক মজুরিভিত্তিক লেদমিস্ত্রি। পরিবারটিতে আর আছে রাকিবের স্ত্রী।
রাকিব শেখ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দিনমজুর পরিবার। নিজস্ব জমি-বাড়ি নেই। দুই ভাই সারা দিন পরিশ্রম করে যে টাকা আয় করেন, সেই টাকা দিয়ে সংসার চালান। ছোট ভাই মজিদ আহত থাকায় তাঁর উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। মজিদের চিকিৎসার জন্য নিজেদের গচ্ছিত কয়েক হাজার টাকা, সঙ্গে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অন্তত আরও ৪০ হাজার টাকা ধারদেনা করে এ পর্যন্ত চিকিৎসা করিয়েছেন। সরকারিভাবে সহযোগিতা ছাড়া তাঁর ভাইকে হয়তো বাঁচানো সম্ভব হবে না।
আহত আবদুল মজিদ বলেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে ছিলেন। ৪ আগস্ট বেলা তিনটায় তাঁদের একটি মিছিল থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থানার ভেতর থেকে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। সেই গুলিতে তাঁর সামনে এক যুবক আহত হয়ে সড়কের ওপর পড়ে যান। তিনি সেই যুবককে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তাঁর শরীরের পেছনে কোমর থেকে পিঠ পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়। তিনি সড়কে পড়ে যান। অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেন। এরপর তাঁকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
আবদুল মজিদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মজিদের চিকিৎসা চলে। এ সময় চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে সাতটি ছররা গুলি বের করেন। একটু সুস্থ বোধ করায় ৭ আগস্ট তাঁরা মজিদকে বাড়ি নিয়ে আসেন। বাড়িতে আনার পর ওই দিন আবারও যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন মজিদ। সেদিনই আবার তাঁকে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এরপর ৮ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আবদুল মজিদকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর মজিদকে নেওয়া হয় বগুড়ার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। এখানে শুরু হয় তাঁর চিকিৎসা। ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই হাসপাতালে মজিদের শরীরে আবারও অস্ত্রোপচার করে সাতটি গুলি বের করে চিকিৎসক দল। এরপর মজিদকে তাঁরা আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
রাকিব শেখ বলেন, তাঁরা দরিদ্র। গুলিবিদ্ধ ভাইয়ের চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাঁর ভাই এভাবে পড়ে থাকলেও স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কেউ তাঁকে দেখতে পর্যন্ত আসেননি। তিনি সরকারের কাছে তাঁর ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার দাবি জানান।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ আবদুল মজিদের শরীরের বাঁ পাশে অবশ হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো।