রাত হলেই জঙ্গল থেকে নেমে আসছে হাতির পাল, আতঙ্কে গ্রামবাসী
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়ইতলী শালবন এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে ৪০–৪৫টি বন্য হাতি অবস্থান করছে। এ দলে পাঁচ থেকে সাতটি হস্তিশাবকও আছে। দিনে বনে দেখা গেলেও সন্ধ্যা নামার পর পর এসব হাতি খাবারে সন্ধানে নেমে আসছে লোকালয়ে। জানমালের রক্ষায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। রাত জেগে মশাল জ্বেলে বন্য হাতির দলকে প্রতিরোধে চেষ্টায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তাঁরা।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে কড়ইতলী গ্রামে হাতির আক্রমণে গোলাপ হোসেন (৫৫) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়। এতে আশপাশের চার গ্রামের মানুষের মধ্যে আরও বেশি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
বন বিভাগ, জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহে ধরে ৪০–৪৫টি হাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাত একটার দিকে হাতির পাল কড়ইতলী এলাকার গোলাপ হোসেনের বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। হাতির ধাক্কায় টিনশেড বসতঘরের ভেতরে একটি রেফ্রিজারেটর পড়ে যায়। এতে চাপা পড়েন গোলাপ হোসেন। ওই সময় আতঙ্কে পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বের হয়ে যান। পরে হাতির দল ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে ওই ঘর থেকে গোলাপের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই রাতেই পশ্চিম কড়ইতলী গ্রামের আবদুল মালেক মণ্ডলের বাড়ি হানা দেয় হাতির দল। এ সময় তাঁদের বসতঘর ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। বুধবার ভোরে পাহাড়ে ফেরার পথে ইউপি চেয়ারম্যানের একটি পার্কের কয়েকটি ঘরেও হামলা করে হাতির দলটি। এ ছাড়া গত শনিবার হাতির পাল মহিষলেটি গ্রামে রহম আলী, সাদেক মিয়া, মনু মিয়া, আবদুল আজিজের বাড়ি ঘর ভেঙে তছনছ করে দেয়। হামলার সময় ঘরে থাকা ধান, চাল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল খাওয়ার পাশাপাশি বিনষ্ট করে এসব প্রাণী। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সীমান্তবর্তী কড়ইতলী,পশ্চিম কড়ইতরী, মহিষলেটি ও কোচপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে।
মাঠে ফসল না থাকায় খাদ্যের সন্ধানে হাতির পাল এখন বসতবাড়িতে হানা দিচ্ছে। হাতির অত্যাচারে গ্রামবাসী নির্ঘুম রাত পার করছেন। এদের জঙ্গলে ফেরাতে বন বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।ভুবনকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া
এ বিষয়ে কড়ইতলী গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, ঝড়বৃষ্টির মধ্যে রাত জেগে তাঁদের হাতি পাহারায় থাকতে হয়। চার গ্রাম মানুষ হাতির আতঙ্কে রাত পার করছেন। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মাঠে ফসল না থাকায় খাদ্যের সন্ধানে হাতির পাল এখন বসতবাড়িতে হানা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ভুবনকুড়া ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া। তিনি জানান, হাতির অত্যাচারে গ্রামবাসী নির্ঘুম রাত পার করছেন। এদের জঙ্গলে ফেরাতে বন বিভাগের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদের নব নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতির পাল ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসএফের বাধায় কারণে সীমান্তের ওপারে যেতে পারে না। বিষয়টির সমাধানের জন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুরের বিট কর্মকর্তা লোকমান হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বন বিভাগের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করতে বলা হয়েছে।ত