প্রথম আলোয় সংবাদ প্রকাশের পর আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সেই রুবেলের পাশে জেলা প্রশাসক
সংবাদ প্রকাশের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ পোশাকশ্রমিক রুবেল মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক (ডিসি) চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। তাৎক্ষণিকভাবে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রুবেলকে ২০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসকের পক্ষে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান নিজের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই চেক হস্তান্তর করেন। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, রুবেলকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে।
রুবেল মণ্ডলের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের বড় শিমুলতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বাবলু মণ্ডলের ছেলে। রুবেল ঢাকার আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
রুবেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ছয়টায় কারখানা যখন ছুটি হয়, তখন সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছিল। আশুলিয়া থানার সামনে মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছিল। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশের ছররা গুলিতে রুবেলের চোখের সামনে এক শিক্ষার্থী মারা যায়। অনেকে আহত হন। এসব দৃশ্য দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি রুবেল। তিনিও মিছিলে যোগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্লোগান দিতে থাকেন। হঠাৎ তাঁর মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শরীর থেকে পাঁচটি গুলি বের করা হয়। মাথার তিনটি গুলি বের করা সম্ভব হয়নি।
রুবেল জানান, কিছুদিন আগে রংপুর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তাঁর মাথা থেকে আরও একটি গুলি বের করা হয়। এখনো তাঁর মাথায় দুটি গুলি রয়েছে। একটি মাথার বাঁ পাশের কানের ওপর ও আরেকটি মাথার পেছনে। পরে নিজ বাড়ি পলাশবাড়ীতে চলে আসেন রুবেল মণ্ডল। মাথায় গুলি থাকায় তীব্র ব্যথা, যন্ত্রণা নিয়ে উন্নত চিকিৎসা পেতে বিভিন্ন স্থানে ধরনা দেন। নিরুপায় হয়ে বাড়িতে থাকেন। রুবেল মণ্ডল বলেন, ‘ঢাকা ও রংপুরে কোনো হাসপাতাল তাঁর মাথার গুলি বের করতে সাহস পাচ্ছে না। এখানকার চিকিৎসকেরা বলছেন বিদেশে যেতে হবে, কিন্তু বিদেশ যাওয়ার টাকা পাব কোথায়।’
রুবেলের পরিস্থিতি নিয়ে ১১ অক্টোবর প্রথম আলোর অনলাইনে এবং ১২ অক্টোবর ছাপা সংস্করণে ‘মাথায় গুলি লেগেছে রুবেলের, যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেন না’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন নজরে আসার পর রুবেলের পাশে এগিয়ে আসে প্রশাসন। তাঁর হাতে চেক তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পলাশবাড়ী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল ইয়াসা রহমান, কিশোরগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, সাংবাদিক শাহ আলম, ফেরদাউছ মিয়া, মাসুদার রহমান, সোহেল রানা প্রমুখ।