‘এ্যালা মোর মেয়ে দুইটাক কায় খাওয়াবে, কায় পড়াবে’
দুই মেয়ে, বৃদ্ধ মা, স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন এরশাদুল হক (৩৫)। রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। গতকাল বুধবার কাজে বের হয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে নির্বাক তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
নিহত এরশাদুল হকের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে। গতকাল বিকেলে এরশাদুলের বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় লোকজন ও স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা যায়। ছোট দুই মেয়ে মায়ের কাছে যেতেই হাউমাউ করে কেঁদে তাঁকে জড়িয়ে ধরে। বিলাপ করতে করতে আমেনা বেগম বলেন, ‘আল্লাহ মুই কেমন করি বাঁচিম? এ্যালা মোর মেয়ে দুইটাক কায় খাওয়াবে, কায় পড়াবে। ক্যানে মোর স্বামীক কাড়ি নিল। মোর ছাওয়া দুইটাক মাওরিয়া বানাইল। মুই কোনঠে যাইম, কী করিম।’
এরশাদুল হকের বড় মেয়ে ইশরাত জাহান ডাঙ্গীরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে রিক্তা মনি ডাঙ্গীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তাদের সহায়-সম্বল বলতে বসতভিটার দুই শতাংশ জমি ও জমির ওপর দুটি ঘর। মায়ের গলা ধরে কাঁদছিল আর ইশরাত জাহান বলছিল, ‘এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য বাবারটে টাকা চানু সকালে। বাবা মোক কছলো, “কাজ থাকি আসি টাকা জোগাড় করি দ্যামো।” সেই বাবা মোর লাশ হয়া বাড়ি ফিরিল। এ্যালা ফরম পূরণের টাকা কায় দিবে, কায় খাওয়াইবে?’
এরশাদুলের মা হাজেরা বেওয়া কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মোক এ্যালা মাটি কায় দিবে। আল্লাহ তুই মোর জানটা নিয়ে মোর বেটাটাক বাঁচালু না ক্যানে?’
প্রতিবেশী ও স্বজন সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকালে পাশের গ্রাম চাপড়াপাড়ায় এরশাদুল হক রাজমিস্ত্রির কাজে যান। সেখানে শাহ আলমের নির্মাণাধীন বাড়ির শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংক খননের জন্য বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে পানি তোলা হচ্ছিল। এ সময় মোটরের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তিনি মারা যান।
প্রতিবেশী জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘পাঁচ সদস্যের পরিবারে চারজনই নারী। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন এরশাদুল। তিনি মারা যাওয়ায় দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে গেল। কে নেবে তাঁর পরিবারের দায়িত্ব, কে দেবে পড়ালেখার খরচ। চারজন নারীর সংসার এখন কেমন করে চলবে আল্লাহই জানেন।’
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, এরশাদুলের দুই শতাংশ বসতভিটা ছাড়া কোনো সহায়–সম্বল নেই। কষ্ট করেই দুই বাচ্চাকে তিনি পড়াতেন। তাঁর দারিদ্র্য ও সংগ্রাম তিনি দেখেছেন। এমন মৃত্যু খুবই কষ্টদায়ক।