অবরুদ্ধ উপাচার্যকে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের ১০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। পরে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনের ফটক তালা দিয়ে ঘেরাও করেন। এতে উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভেতরেই আটকা পড়েন।

উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে। এতে চার ঘণ্টা পর উপাচার্যকে অবমুক্ত করতে সক্ষম হয় তারা।

বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধার অভিযানে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা যৌথভাবে অংশ নেন। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আন্দোলনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের পেছনে ও বঙ্গবন্ধু হলের দিকে অবস্থান নিয়ে কিছু ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে দেখা গেছে। তবে তাঁরা বেশিক্ষণ অবস্থান নিতে না পেরে পালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই উপাচার্যকে প্রশাসনিক ভবন থেকে বের করে নিয়ে আসে পুলিশ।

আরও পড়ুন

মুক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘আমার‌ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। আমরা অনেক ধৈর্য ধরে তাদের সঙ্গে তিনবার বসেছি। তাদের কথা শুনেছি। তারা আমাদের কথা শুরুতে শুনেছিল, এর কিছুক্ষণ পর তারা আমাদের জানাল, বিষয়টি আর আমাদের হাতে নেই, বহিরাগতরা প্রবেশ করেছে। আমার শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে এখানে ছিল না। সবশেষে বহিরাগতরা এখানে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করতে এসেছিল। হলে যারা থাকবে বা চলে যাবে, আজকের জন্য তাদের সব দায়িত্ব আমরা নিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করে আমাদের পানি ও বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ করে দিল। ফলে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি।’

আরও পড়ুন

গোলাম সাব্বির সাত্তার আরও বলেন, ‘আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আমরা পুলিশ প্রশাসনকে কল করেছি। তারা আমাদের উদ্ধার করেছে। আজকে যারা হলে থাকবে, তাদের নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করব। ক্যাম্পাসের পুরো দায়িত্ব এখন প্রশাসনের হাতে, আমরা তাদের নির্দেশে চলব।’

এর আগে বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে হবিবুর রহমান মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লিখিতভাবে পাঁচ দফা দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। বেলা দুইটার মধ্যে এসব দাবির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে আহ্বান জানান তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলা আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পড়েন। একপর্যায়ে প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন তাঁরা। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য নেওয়া খাবারও ছিনিয়ে নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা প্রশাসন ভবনের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

আরও পড়ুন

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচটি দাবি হচ্ছে ক্যাম্পাসে আজীবন সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা, হল খালি করার নির্দেশ ও ক্যাম্পাস ছুটির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা, চলমান আন্দোলন নিয়ে যাতে কোনো মামলা না হয়, তা নিশ্চিত করা, প্রশাসনিকভাবে মিডিয়ার উপস্থিতিতে অভিযান চালিয়ে ক্যাম্পাস অস্ত্রমুক্ত করা এবং ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষগুলো গণরুমে পরিণত করা।

রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নির্দেশনা দেওয়ার পর আমরা ক্যাম্পাসে এসে সন্ধ্যা সাতটা থেকে আধা ঘণ্টাব্যাপী একটি উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ভবিষ্যতে প্রশাসন সহযোগিতা চাইলে আমরা সাহায্য করব।’