কুমিল্লায় ‘গাছের ছায়ায় পাঠের আসরে’ বইপ্রেমীদের মিলনমেলা
আজ শনিবার সকাল থেকে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রাঙ্গণ নানা বয়সী মানুষের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে। কারও হাতে বই, কেউ এসেছেন খালি হাতে। তবে সবার উদ্দেশ্য এক, প্রকৃতির মধ্যে মিশে গাছের ছায়ায় বসে বই পড়া।
প্রযুক্তির আসক্তি থেকে দূরে রেখে বই পড়ায় আকৃষ্ট করতে আজ দিনভর ‘গাছের ছায়ায় পাঠের আসর’ শিরোনামে ব্যতিক্রমী বই পড়ার আয়োজন করা হয়েছে কুমিল্লা বার্ডে। শিশু থেকে শুরু করে বয়োজ্যেষ্ঠরাও এসেছেন বার্ডের সবুজ চত্বরে প্রকৃতিতে বসে পাঠের আসরে মিলিত হতে।
আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার বার্ড ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন না, এমন মানুষ পাওয়া বিরল। এ জন্য বার্ডের উদ্যোগে ‘সবুজের মাঝে বই পড়ি, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে গড়ি’ প্রতিপাদ্যে উন্মুক্ত পরিবেশে ‘গাছের ছায়ায় পাঠের আসর’ শীর্ষক দিনব্যাপী বই পড়া কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এবং বিভিন্ন পেশাজীবী ৬৫০ ব্যক্তি আজ দিনভর গাছের ছায়ায় পাঠের আসরে অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। আর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের জন্য ছিল উন্মুক্ত। বার্ডের সঙ্গে আয়োজনে সহযোগী ছিল গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। সহযোগিতা করেছে নেসলে বাংলাদেশ ও সংযোগ ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। যাঁরা নিবন্ধন করেছেন, তাঁদের জন্য চারটি বুথে রাখা হয় এক হাজারের বেশি বই। অনেকে সঙ্গে বই নিয়ে আসেন। আর শিশুদের জন্য ছিল আরেকটি বুথ। সবাই দিনভর পড়ে বইগুলো নির্দিষ্ট বুথে ফেরত দিয়ে গেছেন। দুপুরে বই পড়ার উৎসব চলাকালেই শিশুদের জন্য ছিল কুইজ প্রতিযোগিতাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেউ আমবাগানে, কেউ কামরাঙাবাগানে, আবার কেউবা বার্ডের সবুজ চত্বরের মধ্যেই বসে বই পড়ছেন। পুরো বার্ড ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছে বই নিয়ে বিভিন্ন মনীষীদের উক্তিসংবলিত ফেস্টুন। শতাধিক ফেস্টুনে কোনোটিতে লেখা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তি ‘বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেওয়া সাঁকো’। আবার কোথাও লেখা রয়েছে সৈয়দ মুজতবা আলীর উক্তি ‘বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না’। কোথাও লেখা রয়েছে মার্কাস টুলিয়াস সিসেরোর উক্তি ‘বই ছাড়া ঘর, একটি আত্মা ছাড়া শরীরের মতো’, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘বইয়ের মতো এত বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই’ বা ভিক্টর হুগোর উক্তি ‘বই হলো সভ্যতার রক্ষাকবচ’।
নিবন্ধন করে বই পড়তে আসা কুমিল্লা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসিফা সিদ্দিকা বলে, ‘বই পড়তে ভালো লাগে। এ জন্য এখানে এসেছি, গাছের ছায়ায় বসে বই পড়ার জন্য। আমরা চাই, এমন উদ্যোগ সব সময় নেওয়া হোক।’
বরুড়ার বাতাইছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, ‘এটি বার্ডের ব্যতিক্রম উদ্যোগ। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ২০ শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের সঙ্গে এসেছে। বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠলে মুঠোফোনসহ প্রযুক্তির আসক্তি কমবে।’
বার্ডের মহাপরিচালক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বই পড়ার শিক্ষা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবনে শ্রেষ্ঠ বন্ধু হচ্ছে বই। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি হচ্ছে শিক্ষা। আর শিক্ষার বাহন বই। প্রযুক্তির কারণে আমরা অনেক কিছু পেয়েছি, আবার অনেক কিছু হারিয়েছি। সবকিছুর অপকারিতা আছে, কিন্তু বই পড়ার কোনো ক্ষতি নেই। জীবনে দক্ষ হতে হলে বই পড়তে হবে। বই অতীতের সঙ্গে বর্তমান ও বর্তমানের সঙ্গে অতীতকে সংযোগ ঘটায়। প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।’