মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে ভ্যানচালকের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে একটি হিন্দু পরিবারকে হুমকি দিয়ে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত ওই নেতার নাম মোতালেব হোসেন (৫০)। তিনি তিল্লী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ভুক্তভোগীরা কেউ দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে মোতালেব এসব করছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগী ভ্যানচালক তারা মিয়ার (৫৫) পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে তিল্লী গ্রামের ভ্যানচালক তারা মিয়ার কাছে স্থানীয় নিকাশী মৌজায় ৪৫ শতক জমি বিক্রি করেন বিএনপি নেতা মোতালেব হোসেনের চাচাতো ভাই কামরুল ইসলাম ওরফে খোকন। এর পর থেকে ওই জমিতে তারা মিয়া চাষাবাদ করে আসছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট মোতালেব হোসেন ১৫ থেকে ২০ জন লোক নিয়ে ওই জমি দখল করে নেন। এর পর থেকে ওই জমিতে চাষাবাদ, এমনকি জমির কাছে না যেতে তারা মিয়াকে হুমকি-ধমকি দেন তিনি। ওই জমিতে তারা মিয়া আবাদ করতে পারছেন না।
তারা মিয়া গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধারদেনা করে বহু কষ্টে ওই জমি কিনছি। আমার জমির সব কাগজপত্রও ঠিকঠাক আছে। নিয়মিত জমির খাজনাও দিয়্যা আইছি। আমরা কোনো দল করি না। মোতালেব জোর কইর্যা আমার ওই জমি দহল নিছে। তার ভয়ে ওই জমিতে যাইতে পারতাছি না।’
অভিযোগের ব্যাপারে বিএনপি নেতা মোতালেব হোসেন বলেন, ওই জমি তাঁদের সম্পদ। জমির সব কাগজপত্র তাঁদের নামে রয়েছে। কারও জমি জোর করে দখল করা হয়নি।’ এখন কেন ওই জমিতে দখল নিতে গেলেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জমি পতিত ছিল। তিনবার সালিসে বসা হয়েছিল। সালিসে জমির রায় তাঁর পক্ষে পেয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
আতঙ্কে এক হিন্দু পরিবার
বিএনপি নেতা মোতালেবের হুমকি-ধমকিতে তিল্লী গ্রামের ঘোষপাড়ার বাসিন্দা রঞ্জিত সরকারের (৬২) পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে। ওই পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। তাঁরা নিজ বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে রঞ্জিত সরকারের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলে বিএনপি নেতা মোতালেব ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে রঞ্জিত সরকার পারিবারিকভাবে বিরোধ মীমাংসা করেন এবং মোতালেবের দাবি করা টাকা তাঁকে দেননি। এ নিয়ে তাঁর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মোতালেব তাঁর দুজন সহযোগীকে দিয়ে রঞ্জিত সরকারকে মারধর করার হুমকি দেন।
রঞ্জিত সরকারের তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেজ মেয়ে চন্দনা সরকার (২৪) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলতি বছর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। চন্দনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা ছাড়া আমাদের সংসারে উপার্জনের কেউ নেই। হুমকি-ধমকির কারণে আমার বাবা তিল্লী বাজারে কর্মস্থল এনজিও অফিসে যেতে পারছেন না। এমনকি মারধরের ভয়ে বাজারেও যেতে পারছেন না। কখন যেন আমার বাবাকে মারধর করা হয়, তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
রঞ্জিত সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১০ বছর আগে ইউপি সদস্য ছিলাম। আমি কোনো দল করি না। এর পরও আমাকে মারবে-কাটবে বলে হুমকি দিচ্ছে।’
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেন বলেন, স্বৈরাচার সরকারের সময় তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। তাঁর ধারণা, এসব মামলায় তাঁকে আসামি করার ক্ষেত্রে রঞ্জিত সরকারের ভূমিকা ছিল। তবে তাঁকে মারধর করার হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা। রঞ্জিত সরকারকে তিনি কোনো হুমকি-ধমকি দেননি।
এসব বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাঙচুর, দখল, চাঁদাবাজি এবং হুমকি-ধমকি না দিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার দেওয়া হয়েছে। এর পরও কেউ যদি এসব করেন, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।