আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে ৭৯টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা

বন্ধ হওয়ার লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। আজ সোমবার সকালে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের মূল ফটকের ভেতরেছবি: প্রথম আলো

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানায় বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ, নানা দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। এতে আজ সোমবার জামগড়া, নরসিংহপুরসহ এর আশপাশের অধিকাংশ কারখানা ছুটি ও বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত অন্তত ৭৯টি কারখানা বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ। তবে সাভারের অন্য এলাকার কারখানাগুলোয় শ্রমিকেরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছে তারা।

এদিকে চার বছর আগে বন্ধ হওয়া লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন–ভাতা পরিশোধের দাবিতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) মূল ফটকের ভেতরের অংশে মানববন্ধন করেছেন। এ ছাড়া ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাটা গ্রিন ফ্যাক্টরির সামনে কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছেন আরম্যাক সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মচারীরা।

আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও তৈরি পোশাক কারখানা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আজ সকালে নির্ধারিত সময়ে সাভার ও ধামরাই উপজেলার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় উপস্থিত হন শ্রমিকেরা। তবে আশুলিয়ার জামগড়া, নরসিংহপুর, ইউনিকসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় কারখানার শ্রমিকেরা বেতন, হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ নানা দাবিতে কারখানায় কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা থেকে বের হয়ে যান। পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওই সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া শ্রমিকদের দাবি পূরণ করতে না পারায় আগে থেকেই অনেক কারখানার ফটকে কারখানা বন্ধ ও ছুটির নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আবদুল্লাহপুর থেকে বাইপাইল পর্যন্ত সড়কের শিমুলতলা এলাকায় হাজিরা বোনাস, গত মাসের বেতনসহ নানা দাবিতে ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। তখন সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা তাঁদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেন।

বকেয়া পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন
সকাল সাতটার দিকে চার বছর ধরে বন্ধ থাকা ডিইপিজেডের ভেতরে দুটি তৈরি পোশাক কারখানা—লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলসের শ্রমিকেরা বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে ডিইপিজেডের মূল ফটকের ভেতরের অংশে মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে শ্রমিক মো. আজাদ বলেন, ‘২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লেনী ফ্যাশন ও লেনী অ্যাপারেলস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই সময় কারখানা দুটির শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেপজার পক্ষ থেকে যেকোনো একটি কারখানা বিক্রি করতে পারলে বিক্রির সেই টাকা দিয়ে সবার বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ৬ মাস আগে একটি কারখানা ৮৩ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমাদের পাওনা ৬৬ কোটি টাকা। বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

এদিকে আজ আটটার দিকে ধামরাই উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় জুতা প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান বাটা শু ফ্যাক্টরির মূল ফটকের সামনে আরম্যাক সার্ভিসেস লিমিটেডের কর্মচারীরা বেতনবৈষম্য দূর করা, স্থায়ী শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, স্থায়ী শ্রমিকদের ক্যানটিন ভাতা, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের ছাঁটাই না করাসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা কর্তপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে শ্রমিকেরা শান্ত হন।

র‍্যাবের গাড়ি ভাঙচুর
আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে আজও টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবের সদস্যরা। এ ছাড়া বিভিন্ন কারখানার সামনে মোতায়েন রয়েছেন সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্যরা।

গতকাল রোববার রাতে হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল বৃদ্ধি, গত মাসের বেতনসহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করেন ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। বিক্ষোভের সময় কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর দুটি গাড়িতে হামলা হামলা ও ভাঙচুর করেন বিক্ষোভকারীরা।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৪, সিপিসি-২–এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর জালিস মাহমুদ খান বলেন, দুষ্কৃতকারীরা র‍্যাবের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাঁরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। বিষয়টি ছায়া তদন্ত চলছে। শিল্পাঞ্চলে যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, সেসব দুষ্কৃতকারীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ ও ছুটি ঘোষণা করা মোট কারখানার সংখ্যা ৭৯। মূলত শ্রমিকদের দাবিগুলোর বিষয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় আগে থেকেই কয়েকটি কারখানা বন্ধ ও ছুটির নোটিশ টাঙিয়ে দেয়। এ ছাড়া কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ না করায় সেগুলো ছুটি দেওয়া হয়েছে। শিমুলতলা এলাকায় শ্রমিকেরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।