রাজশাহী সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর হলেন হিজড়া সুলতানা
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হিজড়া সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের (১৯, ২০ ও ২১) সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হয়েছেন।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন গতকাল বুধবার রাতে যখন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করছিলেন, তখন বিজয়ী হিসেবে সুলতানার নাম শুনে শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে হাততালি দেন অনেকে। তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ভোট পেয়েছেন ৬ হাজার ২৬৩টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোসা. নাজমা খাতুন হেলিকপ্টার প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৭ ভোট।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে কল করলে সুলতানা বলেন, ‘নির্বাচনের ফল পক্ষে আসার পর থেকে এত এত ফোন এসেছে যে কথা বলতে বলতে গলা ভেঙে গেছে। আমার আর কথা বের হচ্ছে না। আনন্দে ভাসছি। বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফোন এসেছে। সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। আর সবাই মিলে রাতে আনন্দমিছিলও করেছি।’ তিনি বললেন, ‘জনগণের সেবা আগে থেকেই করে আসছি। এখন জনগণ আমাকে সেবা করার একটা লাইসেন্স দিল। এখন সেই চ্যালেঞ্জ পূরণ করাটাই লক্ষ্য।’
কী কী প্রতিশ্রুতি পূরণ প্রথম দিকে অগ্রাধিকার পাবে সে বিষয়ে সুলতানা বলেন, ‘আমি বলেছি তিনটি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের কার্যালয় করব। আগে কোনো কার্যালয়ই ছিল না। এই কার্যালয় করার ফলে মানুষ খুব কাছ থেকে আমাকে পাবেন। এটা আমার তিন ওয়ার্ডের মানুষের কথা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম হবে।’ তিনি তাঁদের সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম কোনো কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হলেন বলে জানালেন।
সুলতানা মাঠপর্যায়ে এসে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর একটা পক্ষ বলতে থাকে যে হিজড়াকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে তাঁরা মানুষের ওপর আরও বেশি অত্যাচার করবেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে খুব সহজে বলা যায় যে তারা অত্যাচারী। কিন্তু আমাদেরও তো পেট আছে। সেই পেট চালানোর জন্য কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। সেটা আগে ছিল না। আগে কেউ কাজও দিতে চাইত না।’
হিজড়া বলে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আর বিদ্যালয়ে টিকতে পারেননি সুলতানা। আগের ক্লাসগুলোও পার করেছেন নানা টিপ্পনীতে। শেষমেশ বাড়িও ছাড়তে হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনি ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামের একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সুলতানার নির্বাচিত হওয়াকে একটা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) রাজশাহী জেলার সভাপতি আহমদ সফি উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুলতানা নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে মানুষ হয়েছেন। তিনি সাধারণ মানুষের মনের কষ্ট বোঝেন। সে জন্য তিনি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ তাঁদের বিশ্বাস করেছে এবং নিজেদের মানুষ মনে করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য মাইলফলক। তিনি সম্ভবত বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনের মধ্যে প্রথম কোনো জনপ্রতিনিধি।’