খুলনা সিটি নির্বাচন
প্রার্থীদের শক্তির ফারাক, নিরুত্তাপ ভোটের আভাস
কাউন্সিলর পদেও বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী না থাকায় তাঁদের সমর্থকেরা এবার ভোট দিতে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
বিএনপি এবার ভোটে নেই। মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সাত প্রার্থীর মধ্যে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বৈধ অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক এগিয়ে আছেন—সব মহলেই এমন ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। যাচাই-বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা আবদুল আউয়াল ও জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলামের মধ্যে কে খালেকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। ওই দুই দলেরই দাবি, তাঁদের প্রার্থীই হবেন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
এদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, খুলনায় মেয়র পদে একতরফা নির্বাচনই হবে। তবে ভোটের মাঠে বিএনপির ভোটাররা কাকে ভোট দেবেন, এ নিয়ে নানা সমীকরণ চলছে প্রার্থীদের মধ্যে। যদিও মেয়র পদে প্রার্থী না থাকা এবং কাউন্সিলর পদেও বিএনপির উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রার্থী না থাকায় তাঁদের সমর্থকেরা এবার ভোট দিতে যাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনে তালুকদার খালেক প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু পেয়েছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ভোট। পরাজয়ের পর নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ করেছিল বিএনপি। ইসলামী আন্দোলনের মুজ্জাম্মিল হক ১৪ হাজার ৩৬৩ ভোট পান। মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্যসচিব এস এম মুশফিকুর রহমান লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ১ হাজার ৭২ ভোট। এবার ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টি প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। তবে জাতীয় পার্টি থেকে এবার মনোনয়ন পাওয়া শফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচন করে মাত্র ৩ হাজার ৭৬ ভোট পেয়েছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন টানা ১৯ বছর। তিনি চারবার সংসদ সদস্য, একবার ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং কেসিসিতে দুবার মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী হাবিবুন নাহার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী। শক্তিশালী প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন নিয়ে দলটি খানিকটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্বাচন করছে। তবে কেন্দ্রে ভোটার হাজির করাকেই এখন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
ইসলামী আন্দোলন মহানগর শাখার সহসভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক শেখ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মানুষ আমাদের বেছে নেবে। আমাদের ৪০ হাজার নিজেদের ভোটব্যাংক আছে। বিএনপির সমর্থকেরা সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে আমাদেরই ভোট দেবেন। আমাদের কিছু অপ্রকাশ্য সমর্থকও আছেন। আর ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের ভোটও পাব।’
এদিকে খুলনায় জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভেদ আছে। জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তিনজন প্রার্থী। বড় ভাই, মেজ ভাই আর ছোট ভাই। জাতীয় পার্টি এখানে মাঝের ভাই। মানুষ কিন্তু খালেক ভাইয়ের বিপক্ষে ভোট দিতে চাইছেন। তাহলে আমার সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বিএনপি যেহেতু মাঠে নেই, তাদের ভোটও আসবে। তাদের সমর্থকেরা আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে ভোট দেবেন।’ ২০১৩ সালের ভোট কম পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে নির্বাচনে আমার দোয়াত-কলম মার্কা ছিল, এবার কিন্তু লাঙ্গল।’