ধর্ষণকাণ্ডে সামনে এল আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহর ‘অপহরণ রহস্য’

অপহরণ
প্রতীকী ছবি

সিলেট নগরে এক নারীকে ধর্ষণের ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণের অভিযোগ ওঠেছে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেই ছবি ও ভিডিও দিয়ে ওই নারী ও তাঁর স্বামীকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানান। পরে পুলিশ গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে।

এ ঘটনা গত সোমবার বিকেলের। ভুক্তভোগী নারী পরের দিন মঙ্গলবার সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযুক্ত দুজনকে আসামি করে মামলা করেন। এই দুজন হলেন মো. সামরান হোসেন চৌধুরী (রাজু) ও মো. মাহফুজুর রহমান।

তবে ওই নারীর স্বামী দাবি করেন, কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ অপহৃত হয়েছিলেন। এ ঘটনার ভিডিও তাঁর কাছে সংরক্ষিত আছে। মূলত তাঁর মুখ বন্ধ রাখতেই তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা। পুলিশকে পুরো ঘটনা জানালেও প্রকৃত তথ্য আড়াল করে মনগড়াভাবে এজাহার সাজিয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী নারীর (২৮) বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। তাঁর স্বামী সিলেট নগরের বাস্তবায়নাধীন একটি প্রকল্প দেখাশোনার কাজ করতেন। সে কারণে ওই প্রকল্প এলাকার ভেতরের একটি বাসায় পরিবারটি থাকত।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, প্রকল্পে মো. সামরান হোসেন চৌধুরী নামের একজনের শেয়ার আছে। তিনি ওই নারীর স্বামীকে প্রকল্পে কাজ দেন। এ ছাড়া সিলেট সদরের মো. মাহফুজুর রহমান (৪২) নামের একজনকে প্রকল্প এলাকার ভেতরে খালি থাকা জমিতে কৃষিকাজের জন্য ইজারা দেন।

এজাহারে বলা হয়, জমি ইজারা নেওয়ার সূত্রে মাহফুজুর প্রায়ই ওই নারীর বাসায় যাওয়া-আসা করতেন। গত ২৭ ডিসেম্বর মাহফুজুর ওই নারীকে সামরানের সহযোগিতায় ধর্ষণ করেন। এরপরও একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের ভিডিও সামরান মুঠোফোনে ধারণ করেন। পরে ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে সামরান ওই নারীকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। ওই নারী এতে রাজি না হলে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে ভয় দেখান।

সবশেষ ৬ জানুয়ারি বেলা তিনটার দিকে ওই নারীকে একা পেয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শারীরিকভাবে নির্যাতনের চেষ্টা করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, বিষয়টি ওই নারী বাসার বাইরে থাকা তাঁর স্বামীকে মুঠোফোনে জানান। এরপর তাঁর স্বামী ৯৯৯-এ কল করে বিষয়টি পুলিশকে জানান। পুলিশ গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

এদিকে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর অভিযোগ, ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকে কয়েকজন অপহরণ করেন। অপহরণকারী ব্যক্তিরা মিসবাহর পরিবারের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ নিয়ে তাঁকে নগরের সাগরদীঘির পাড় এলাকায় আহত অবস্থায় ফেলে রেখে যান। সেখান থেকে মিসবাহকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁর পরিবার। যাঁরা তাঁর স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছেন, তাঁরাই মিসবাহর অপহরণের সঙ্গে জড়িত। তাঁরা মিসবাহকে যেখানে আটকে রেখেছিলেন, সেই স্থানের পাশেই তাঁর বাসা। সেখানকার সিসিটিভির অ্যাকসেস তাঁর ছিল। তিনি সিসিটিভিতে অপহরণের দৃশ্য দেখেন। সেগুলো নিজের মুঠোফোন ও কম্পিউটারে রেখে দেন। অপহরণকারী ব্যক্তিরা সে তথ্য জেনে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে ওই বাসা ছেড়ে যান বলে তিনি দাবি করেন।

ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর অভিযোগ, তাঁকে বাসায় না পেয়ে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও করেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। যদি মিসবাহর ঘটনার ভিডিওর কথা তিনি কাউকে জানান, তাহলে স্ত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় তাঁকে।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মামলা নেওয়া হয়েছে। ওই নারী যেমন অভিযোগ করেছেন, সেভাবেই মামলা নেওয়া হয়েছে। বাদীর স্বামীর অভিযোগের বিষয়টি জানা নেই। তবে পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা যাচাইয়ে কাজ করবে।

এর আগে ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে মিসবাহ উদ্দিনকে নগরের সাগরদীঘির পাড় এলাকা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। রাতেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। পরদিন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে মিসবাহ উদ্দিন আত্মগোপনে আছেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তাই পুলিশের চোখ এড়িয়ে রাতের বেলা তিনি মাঝেমধ্যে আত্মগোপনে থাকা বাসাটি থেকে বের হতেন। ওই সময় তিনি অপহৃত হন। পুলিশ এ ঘটনা নিশ্চিত করলেও এখন পর্যন্ত মিসবাহ কিংবা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি।