ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালতের অচলাবস্থায় ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আজ রোববারও বিচারিক কার্যক্রম চলেনি
ছবি: প্রথম আলো

পায়ের সমস্যার কারণে লাঠির সাহায্য নিয়ে চলতে হয় হাদিস মিয়ার (৪৫)। আজ রোববার সকালে লাঠিতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে যান তিনি। আদালতে অচলাবস্থা চলায় বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি।

তিন কর্মদিবস ধরে (গত বুধ, বৃহস্পতি ও রোববার) ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ কারণে প্রতিদিন হাদিস মিয়ার মতো প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগে পড়েছেন।

হাদিস মিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বেপারিপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর জমিসংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির জন্য আদালতে তারিখ নির্ধারিত ছিল আজ। এ জন্য অসুস্থ শরীরে আদালতে হাজির হন তিনি।

হাদিস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরাইল থেকে আদালত পর্যন্ত রাস্তাটি ভালো নয়। আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আসা-যাওয়ায় ২০০ টাকা খরচ হয়। অসুস্থ শরীরে আদালতে এসে নিরাশ হলাম। আদালত বসেনি। বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। আবার তারিখ নাকি পড়বে।’

গত ১ ডিসেম্বর শীতকালীন ছুটির আগে আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে তিনটি মামলা গ্রহণ করা হয়নি। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিচারককে মামলা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন বিচারক তাঁদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছুটি শেষে ২৬ ডিসেম্বর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সভায় মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১ জানুয়ারি মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর এজলাস চলাকালে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন

৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন আদালতের সব এজলাসের দরজা ও প্রধান ফটকে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে। একই দিন আগের ঘটনা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে দুই বিচারকের অপসারণ ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান আইনজীবীরা। ৫ জানুয়ারি সকালে কর্মচারীরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। তবে ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন, যা চলবে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

গত বৃহস্পতিবার থেকে তিন কার্যদিবসের এ কর্মবিরতি পালন শুরু করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা আইনজীবী সমিতি। গত বুধ, বৃহস্পতি ও রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো আদালতেই বিচারিক কার্যক্রম চলেনি। এতে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

রোববার সরাইল উপজেলার মলাইশ গ্রামের জায়গাসংক্রান্ত বিষয়ে মামলার জন্য আদালতে আসেন নানু বেগম, মাজু মিয়া ও আবদুল আহাদ। তাঁরা বলেন, ‘সকালে আদালতে হাজির হয়ে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কিন্তু আদালতের কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

আরও পড়ুন

আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা নাজমুল হোসেন, কসবার সাইফুল ইসলাম ও বিজয়নগর উপজেলার সেলিম চৌধুরী বলেন, ‘শীতের সকালে ঠান্ডার মধ্যে মামলার কারণে আদালতে এলাম। কিন্তু আদালত বসেনি। আমরা গরিব মানুষ। অনেক দূর থেকে কষ্ট করে এসে যদি বিচার না পাই, তাহলে যাব কোথায়। যে আদালতে মানুষ আসে বিচার পেতে, সেই আদালতের দুই পক্ষ কাঠগড়ায়। কোথায় যাব আমরা। বিচারপ্রার্থী মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে এই সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত।’

আদালত বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবার সমিতির সাধারণ সভা হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের দাবিগুলো, রেজিস্টার ও আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে আমাদের মূল বক্তব্য ও দাবি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যাচ্ছে না।’