আসামিরা হাজির, আসেননি তদন্তকারী কর্মকর্তা, আবার পেছাল সাক্ষ্য গ্রহণ

হত্যার শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা আসামিদের হাজির করা হয়েছিল আদালতে। জামিনে থাকা আসামিরাও হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু আসেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তাই বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলার সর্বশেষ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ আবারও পিছিয়েছে। এ নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ১১ বার পেছাল বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা অশোক কুমার সিংহ জানিয়েছেন, তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত থেকে কোনো সমন পাননি। তাই সাক্ষ্য দিতে হাজির হননি।

আরও পড়ুন
ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি আমানুর রহমান খান (রানা), সহিদুর রহমান, জাহিদুর রহমান ও সানিয়াত রহমান
ফাইল ছবি

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, আজ বৃহস্পতিবার এই মামলায় কারাগারে থাকা আসামি টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি ও বাবুকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। প্রধান আসামি সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাসহ জামিনে থাকা অন্য আসামিরাও হাজির হন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অশোক কুমার সিংহ হাজির না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। পরে টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দায়িত্বে থাকা বিচারক আফরোজা বেগম সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৫ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অশোক কুমার সিংহ মুঠোফোনে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমি চারবার গিয়েছি, একবারও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। আর এবার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আমি সরকারিভাবে কোনো কাগজ বা চিঠি পাইনি। আমাকে সরকারিভাবে বা থানা থেকে কোনো সমন পাঠানো হয়নি।’

আরও পড়ুন

এ ব্যাপারে নিহত ফারুক আহমেদের ছেলে আহমেদ সুমন মজিদ বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক, সমন জারি তো আমার দায়িত্ব নয়। আমি তো তাঁদের প্রশ্ন করতেই পারি, কেন তাঁরা সমন সঠিক সময়ে পাঠালেন না। অফিশিয়াল চিঠির দায়িত্ব তো আমার নয়, যাঁরা দায়িত্বশীল তাঁদের।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি দায়িত্বের গাফিলতি এটা। সাক্ষী কেন জানবেন না?’

এ প্রসঙ্গে আদালত পরিদর্শক তানবীর আহমেদ বলেন, ‘মামলার শুনানি বা সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ঘন ঘন পড়ায় আমরা দ্রুততার সঙ্গে সমন রেডি করে বগুড়া জেলা পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি গত মঙ্গলবার। সেখান থেকে সেই সমন মামলার সাক্ষীর কাছে পৌঁছাতে হয়তো পারেনি।’

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন দিন পর তাঁর স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

আরও পড়ুন

২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত থাকা সন্দেহে আনিছুল ইসলাম ওরফে রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামের দুই ব্যক্তিকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাঁদের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যা মামলার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন ও বর্তমান সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তাঁর অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহসভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে।

তদন্ত শেষে সংসদ সদস্য আমানুর রহমানের চার ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।

আরও পড়ুন