রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা ডাবলু সরকারকে অব্যাহতির দাবিতে কেন্দ্রে চিঠি
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিতে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠিতে ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের প্যাডে লেখা ও মহানগর কমিটির ৪৮ সদস্যের সই করা দলীয় প্রধান বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের একটি অশ্লীল ভিডিও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি রাজশাহীসহ আশপাশের জেলা এবং স্থানীয়-জাতীয় গণমাধ্যমে মুখ্য আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ডাবলু সরকারের এমন নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন তাঁকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সকল কর্মকাণ্ড থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছে। ডাবলু সরকারের এমন কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।’
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ডাবলু সরকার আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আবদুস সাত্তার টিপুর প্রধান সহযোগী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রাজাকার আবদুর রশিদ সরকারের ছেলে।
এই চিঠির নিচে সই করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাফফর হোসেন। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহানও সই করেছেন।
সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো ওই চিঠির প্রথম পাতায় দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতির কার্যালয়ে আজ বুধবার চিঠিটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। ২৭ মার্চ এই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
এই চিঠির নিচে সই করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোজাফফর হোসেন। বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে এই চিঠিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বেগম আখতার জাহানও সই করেছেন।
ওই চিঠির সংযোজিত পাতায় সই করেছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডাবলু সরকারের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সবাই সই করেছেন। তিনিও করেছেন। তিনি আরও বলেন, রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঢাকায় ডাকা হয়েছে। নেত্রী তাঁদের সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বসবেন বলে সময় দিয়েছেন। তবে কী বিষয় নিয়ে কথা বলবেন, তা তাঁদের জানানো হয়নি। ইতিমধ্যে তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন। তাঁর জানামতে, ডাবলু সরকারও ঢাকায় পৌঁছেছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ ডাবলু সরকার তাঁর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন, ততক্ষণ তাঁকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেই হচ্ছে। ডাবলু সরকার তাঁকে জানিয়েই ঢাকায় এসেছেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এ রকম কোনো চিঠি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। ঢাকায় কোনো বৈঠক ডাকা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটাও তিনি জানেন না। তাই প্রতিবেদককে বলতে পারবেন না।
একটি অশ্লীল ভিডিওকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে বহিষ্কারের দাবিতে চার দিন রাজশাহীতে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর আগে ‘রাজশাহী আওয়ামী পরিবারের’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হলেও গত সোমবার রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি অশ্লীল ভিডিও লোকজনের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়। এই ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে ১৮ ফেব্রুয়ারি নগরের বোয়ালিয়া থানায় ডাবলু সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন। এতে তিনি দাবি করেছেন, ভিডিওটি সম্পাদনা করা। তাঁর দাবি, ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির মুখ তাঁর। তবে শরীরের নিচের অংশ অন্য কারও। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সম্মানহানি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে।