ফসলি জমিতে নতুন ৭ ইটভাটা 

উপজেলাটিতে ১১৪টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৬৯টি ভাটার  প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেই।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে তিন ফসলি জমিতে নতুন করে আরও সাতটি ইটভাটা চালু হয়েছে। ভাটাগুলোর তিনটি পড়েছে উপজেলার গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা এলাকায়। এর মধ্যে ভাটার আংশিক পড়েছে মির্জাপুর পৌরসভার বাইমহাটীতে। এ ছাড়া বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে তিনটি এবং চান্দুলিয়া গ্রামে আরও একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন।

ওই এলাকার তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়।
আলম হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী

উপদেষ্টার এমন ঘোষণার পরও মির্জাপুরে নতুন সাতটি ইটভাটা চালু হয়েছে। এ নিয়ে মির্জাপুরে ১১৪টি ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৬৯টি ভাটার পরিবেশগতসহ প্রশাসনিক ছাড়পত্র নেই বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাটাগুলোর অধিকাংশই মির্জাপুরের পাহাড়ি অঞ্চল, আবাদি জমি, আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলপথ ও গ্রামীণ সড়কসংশ্লিষ্ট এলাকায় পড়েছে।

অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যক এলাকা, পৌর এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা থেকে ন্যূনতম এক কিলোমিটার ও সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার, পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে আধা কিলোমিটার, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ রয়েছে।

নতুন স্থাপিত ভাটাগুলো হচ্ছে বহুরিয়া গ্রামের আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ও বাটা ব্রিকস, চান্দুলিয়া গ্রামের এইচইউবি ব্রিকস, দেওহাটা গ্রামের মল্লিকপাড়ার সনি ব্রিকস ও রান ব্রিকস এবং পাথালিয়াপাড়ার বিঅ্যান্ডবি ব্রিকস। এর মধ্যে রান ব্রিকসটির কিছু অংশ মির্জাপুর পৌরসভার বাইমহাটী এলাকায় পড়েছে।

অনুমতি ছাড়া কীভাবে নতুন ভাটা স্থাপন করা হয়েছে জানতে বিঅ্যান্ডবি ব্রিকসের মালিক দেওহাটা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে কল করলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এসএমবি ব্রিকসের মালিক ফরিদ হোসেন জানান, সাতটি ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়েছে। ইটভাটা স্থাপন কাজ শুরুর পাশাপাশি রিটগুলো করা হয়। তবে এ বিষয়ে শুনানি হয়েছে কি না, তা জানাতে পারেননি।

এদিকে ভাটাগুলোতে ইট তৈরির জন্য উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, বংশাই ও লৌহজং নদের পাড় কেটে মাটি আনা হচ্ছে। মাটি পরিবহনের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। এ ছাড়া ইটভাটা নির্মাণের ফলে কৃষিজমি কমে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ায় জমির ফসল ও সবজি বিনষ্ট হচ্ছে। গাছে ফল এলেও তা ঝরে পড়ে যায়। দেওহাটা গ্রামের নকু মার্কেটের ব্যবসায়ী আলম হোসেন বলেন, ওই এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা হওয়াতে কৃষির আবাদ কমে গেছে। গাছে ফল ধরলে নষ্ট হয়ে যায়।

অপর দিকে ভাটাগুলোতে এরই মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগও দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা পুরোনো ভাটার কিছু কাগজ দেখিয়ে নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ জন্য নতুনভাবে পাঁচটি খুঁটিও স্থাপন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের  টাঙ্গাইল কার্যালয়ের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক জানান, অবৈধ ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া নতুন ভাটায় বিদ্যুৎ-সংযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মির্জাপুর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতির প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স, জমির মালিকানাসংক্রান্ত কাগজ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েছেন। তা দেখে নতুন কয়েকটি ভাটায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। মির্জাপুরের ১১৪টি ভাটার মধ্যে মাত্র ৩২টিতে বিদ্যুৎ-সংযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।