উঠতি বাজারে আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

বেড়ায় সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় তা নিম্ন আয়ের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার বেড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাঁচাবাজারেছবি: প্রথম আলো

পাবনার বেড়া বাজারে ভাঙাচোরা একটি দোকানে শিঙাড়া, পুরি ও ছোলা বিক্রি করেন এনামুল হক (৫৫)। কয়েক মাস আগেও প্রতিদিন ৬০০–৭০০ টাকা আয় হতো তাঁর। তখন নিত্যপণ্যের দাম তুলনামূলক কম থাকায় সংসার চলে যেত। এখন একই দোকান থেকে ৩০০–৪০০ টাকাও আয় হয় না। উল্টো প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এখন সপ্তাহে দু-এক দিনও ভাতের সঙ্গে সস্তা আমিষ জুটছে না। সবজির দামও নাগালের বাইরে থাকাই বেশির ভাগ দিনই ডাল দিয়ে ভাত খেতে হয়।

এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দোকানের খাবারের প্রধান উপকরণ আটার দাম ১৫ দিনে কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচের দাম আকাশছোঁয়া। পাম অয়েলের দাম লিটারে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। এতে দোকানের খাবার খরচ অনেক বাড়লেও আমাকে খদ্দরের কাছে শিঙাড়া-পুরি আগের দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আগের চেয়ে আয় অর্ধেকে নেমে গেছে। উল্টো ডিম, শাক-সবজিসহ সবকিছুর দামই বাড়ায় তিনবেলা নুন-ভাত জোটানোই মুশকিল হয়ে গেছে।’

সপ্তাহ দুয়েক আগের ৫৬ টাকার চাল এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৩৫ টাকার আটা ৪০, ১৩৫ টাকার পাম অয়েল ১৬৩, ১৭০ টাকার সয়াবিন ১৭৭, ১২ টাকার ডিম ১৫, ১৬০ টাকার চাষের পাঙাশ ১৮০, ১৬০ টাকার তেলাপিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।

এনামুল হকের মতো নিম্ন আয়ের অনেক মানুষেরই আয় কমে গেছে। তাঁরা ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ সস্তা আমিষজাতীয় খাবার কিনতে পারছেন না। উল্টো নিত্যপণ্যের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে চলায় দিশাহারা অবস্থায় পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ।

তাঁরা বলছেন, বেশ কয়েক দিন ধরে চাল, আটা, ডিম, মাছ, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। কিন্তু সেভাবে আয় বাড়ছে না। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন রিকশাচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ। অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আয় কমে গেছে। এতে গরিবের আমিষ হিসেবে পরিচিত ডিম, পাঙাশ, তেলাপিয়া, ব্রয়লার মুরগিও তাঁরা কিনতে পারছেন না।

বৃহস্পতিবার বেড়ায় নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ দুয়েক আগের ৫৬ টাকার চাল এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ৩৫ টাকার আটা ৪০, ১৩৫ টাকার পাম অয়েল ১৬৩, ১৭০ টাকার সয়াবিন ১৭৭, ১২ টাকার ডিম ১৫, ১৬০ টাকার চাষের পাঙাশ ১৮০, ১৬০ টাকার তেলাপিয়া ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।

অসময়ের বৃষ্টি ও বন্যায় সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে সবজির। আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচসহ প্রতিটি সবজির দামই এখন বেশি। নিম্ন আয়ের অনেকে এগুলো কেনা প্রায় বাদই দিয়েছেন। সরেজমিনে বেড়ার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেল, ১৫ দিন আগের ১৫০ টাকার কাঁচা মরিচ ৩৫০, ৪০ টাকার কচুমুখি ৬০, ২০ টাকার ধুন্দুল ৬০, ৩০ টাকার লাউ, বেগুন, করলা, পটোল ও মুলা ৮০, ১৫ টাকার কাঁচা পেঁপে ৪০, ৩০ টাকার ঝিঙে ৬০ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা।

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যে অসময়ের বৃষ্টিতে দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। এমন অবস্থায় অসহায় মানুষের নিত্যপণ্যের কেনাকাটায় সরকারের ভর্তুকি বাড়ানো উচিত।
এ বি এম ফজলুর রহমান, সভাপতি, ক্যাব, পাবনা

বেড়া বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. সেরাই বলেন, ‘আমাগরে এলাকা সবজি উৎপাদনের এলাকা। অথচ হাটে যায়া আমরা স্থানীয় সবজি পাই না। যা পাই, তার সবই বাইরের। বৃষ্টিতে নাকি এলাকার সবজিখেত নষ্ট হয়া গেছে। এ জন্য প্রতিটি সবজির দাম প্রায় ডাবল হয়া গ্যাছে। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ এখন সবজি কিনব্যার আসতেছে না বললেই চলে।’

বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার সজীব হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। কাজ করতে পারলে প্রতিদিন ৬০০ টাকা আয় হয়। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টির কারণে সেটিও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এতে আয় অর্ধেকে নেমেছে। আক্ষেপ করে সজীব বললেন, ‘পাঁচজনের সংসার আমার। চাল আর ডাল কিনব্যার যায়াই অস্থির হয়া পড়তেছি। ডিম, মাছ কেনার কথা এখন ভাবার সময় নাই।’

বেড়া পৌর এলাকার শেখপাড়া মহল্লার রোকেয়া খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী সেলুনে কাজ করে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করেন। তিনি অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে সামান্য আয় করেন। শ্বশুর, শাশুড়ি, দুই সন্তানসহ ছয়জনের সংসারে শেষ কবে ডিম বা মাছ খেতে বেগ পেতে হয়। কোনো দিন পাতলা ডাল আবার কোনো দিন আলুসেদ্ধ দিয়ে কোনোমতে ভাত খাওয়া চলছে তাঁদের।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পাবনার সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এর মধ্যে অসময়ের বৃষ্টিতে দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষের আয় কমে গেছে। এমন অবস্থায় অসহায় মানুষের নিত্যপণ্যের কেনাকাটায় সরকারের ভর্তুকি বাড়ানো উচিত। দরিদ্রদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি টিসিবি ও ওএমএস বাড়ানো উচিত।