মুহিবুল্লাহ খুনে অংশ নেন নুর কামালের নেতৃত্বে আরসার ১২ সদস্য: র‍্যাব

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার নুর কামাল। আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজার র‍্যাব কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসার) ‘কিলিং গ্রুপের’ কমান্ডার নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন (৪১)। তাঁর নেতৃত্বে ১২ জনের একটি দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে মুহিবুল্লাহর কার্যালয়ে প্রবেশ করে। একপর্যায়ে গুলি করে মুহিবুল্লাহকে হত্যা করা হয়।

নুর কামালকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আজ সোমবার দুপুরে কক্সবাজারে র‍্যাব-১৫ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। এর আগে গতকাল রোববার রাতে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে নুর কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি এলজি, দুটি ওয়ান শুটারগান এবং বেশ কিছু গুলি উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে র‌্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার আরসার কিলিং গ্রুপের প্রধান নুর কামাল
ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, নুর কামাল আরসার ‘কিলিং ও গান গ্রুপের’ কমান্ডার ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে নিয়ন্ত্রণে রাখা হতো উখিয়ার ১, ২, ৬ ও ৭ নম্বর রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির। নুর কামালের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা রিজওয়ান রুশদী এবং ছয় রোহিঙ্গা শিক্ষককে খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) খুন হয়েছেন আরসার কিলিং গ্রুপের হাতে। গ্রুপটি নগদ টাকার বিনিময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনে দুর্গম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসত। পরে ওই অস্ত্র ও গোলাবারুদ আরসার সন্ত্রাসীদের সরবরাহ করা হতো।

নুর কামাল ১৫টি হত্যা মামলার পলাতক আসামি জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, টার্গেট কিলিং সম্পন্ন করার পাশাপাশি নুর কামালের নেতৃত্বাধীন গ্রুপটি চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। গ্রুপটির কথামতো কেউ চাঁদা না দিলে অপহরণের পর নির্যাতনের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করা হতো। অনেক সময় চাঁদার জন্য খুন করে গহিন জঙ্গলে লাশ গুমের ঘটনাও ঘটিয়েছে গ্রুপটি।

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবির থেকে আরসার কিলিংগ্রুপ প্রধান নুর কামাল এবং নুর কামালকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‍্যাব-১৫ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করছেন র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মাঈন। আজ সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর কামাল বলেছেন, তিনি ২০১৬ সালে মিয়ানমারে অবস্থানকালে আরসায় যোগ দেন। সেখানে এক বছর আরসার প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এসে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৭) বসবাস শুরু করেন। ২০১৮ সালের দিকে তিনি আরসার কমান্ডার মুফতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় আরসার ক্যাম্প কমান্ডারের দায়িত্ব পান। পরে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশনায় আরসার ২০ সদস্যকে নিয়ে কিলিং গ্রুপটি তৈরি করেন।

র‌্যাব-১৫–এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, নুর কামালকে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করে মামলার প্রস্তুতি চলছে।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। তিনি ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ জুন কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বলা হয়, মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন আরসাপ্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ৩৬ জন। কিন্তু ঠিকানা শনাক্ত না হওয়ায় আতাউল্লাহসহ আরসার সাতজন কমান্ডারকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মামলাটিতে বর্তমানে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।