ফারাজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনা মূল্যে চিকিৎসা পেলেন আট শতাধিক মানুষ
দীর্ঘদিন ধরে বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন বাগেরহাট সদরের গোবরদিয়া এলাকার নাসিমা বেগম। বিভিন্ন সময় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি। ওষুধ সেবনে সাময়িক উপকার হলেও কয়েক দিন পর সমস্যা বাড়ে। অর্থাভাবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছিলেন না।
ঢাকা থেকে আসা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবেন, এ খবর শুনে খুশি হন তিনি। সে অনুযায়ী শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরের কুলিয়াদাইড় ঈদগাহ মাঠে আসেন তিনি।
নাসিমা বেগমের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে শুক্রবার বাগেরহাট সদর উপজেলার কুলিয়াদাইড়ে এসেছিলেন বিভিন্ন এলাকার আট শতাধিক মানুষ। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ চিকিৎসাশিবিরে রোগী দেখেন ঢাকা থেকে আসা সার্জারি, মেডিসিন, গাইনি, হৃদ্রোগ, অর্থোপেডিক, শিশু বিশেষজ্ঞসহ ১৭ জন চিকিৎসক। এখানে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ কোম্পানি এসকেএফের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয়।
এখানে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করার পর নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ বাবা। আইজ কয়ডা বছর ধইরে ভুগতিছি। হাসপাতালে যাই, ওষুধ খাই কিন্তু ভালো হতি পারলাম না। বড় ডাক্তার দেখাব, টাকা পাব কোথায়। শুনিছি ফ্রি চিকিৎসা হয়, ওষুধ দিচ্ছে, তাই শুনে আসছি এখানে। এখানের ডাক্তারেরা অনেক ভালো। সব শুনে ওষুধ লিখিছে, ওষুধও দিছে।’
‘মানবতার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা’ স্লোগানে আয়োজিত এ চিকিৎসাশিবিরে সহযোগিতা করে মাহমুদা-আফতাব ফাউন্ডেশন। শুক্রবার সকালে এ চিকিৎসা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন স্থানীয় প্রবীণ শিক্ষক কাজী মহিউদ্দিন টিপু।
এ সময় ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ উপমহাব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, মাহমুদা-আফতাব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রফিকুস সালেহীন, এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের খুলনা বিভাগীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. খায়রুজ্জামান, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক (বাগেরহাট) মো. রকিবুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হুইলচেয়ারে করে এখানে নিতে আসেন হাড়িখারী এলাকার শেখ জহুরুল আলী (৫৫)। দুই বছরের বেশি সময় ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) তিনি। কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। ডাক্তার-ওষুধের ওপরই আছি। অসুস্থ শরীর নিয়ে ঢাকা-খুলনা যাওয়া অনেক অসুবিধা। বাড়ির কাছে সব বড় বড় ডাক্তার আইছে শুনে আইছি। তাঁরা অনেক আন্তরিক। ভালোভাবে দেখছেন। আমি দোয়া করি। এমন ক্যাম্প মাঝে মাঝে হলে আমাদের মতো মানুষের অনেক উপকার হয়।’
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এখানে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আয়োজকেরা জানান, দিনব্যাপী এ কার্যক্রমে আট শতাধিক প্রান্তিক মানুষ সেবা পেয়েছেন। তাঁদের মাঝে বেশির ভাগই ছিলেন নারী।
এখানে রোগী দেখেছেন গাইনি বিশেষজ্ঞ মেহেরুন নেসা। তিনি জানালেন, ‘এর আগেও আমরা এখানে রোগী দেখেছি। নারীদের মাঝে ১৮ থেকে ৪৯ বছরের রোগী আমরা বেশি পেয়েছি। ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার পাশাপাশি আমরা তাঁদের কাউন্সেলিং করেছি। গ্রামের নারীদের জন্য এ ধরনের আয়োজনে খুব বেশি প্রয়োজন।’
মাহমুদা-আফতাব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ রফিকুস সালেহীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখানে শেষ কিছু জটিল রোগী পেয়েছি। যেমন হার্টের সমস্যা, টিউমারসহ বেশ কিছু রোগী আছেন, তাঁদের অপারেশন প্রয়োজন। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেননি বা করতে পারেননি। আমরা তাঁদের ঢাকায় নিয়ে অপারেশনসহ প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসা কীভাবে দেওয়া যায়, সে বিষয়েও চেষ্টা করছি।’
আজ এখানে রোগীদের আরও যাঁরা চিকিৎসা দিয়েছেন, তাঁরা হলেন শেখ আবদুল ফাত্তাহ্, সালমান সালেহীন, সেলিনা খাতুন, সুমাইয়া জাকির, এজাজ হোসেন, কাজী শরিফুল ইসলাম, মিতুল চক্রবর্তী, মো. আবদুল কাদের, এম এ করিম, মারিয়া সাদাফ, সায়রা আক্তার, নাসিম-উল-আহমেদ, মোহাম্মদ মিজানুল হক, হোসনে আরা হোসেন ও বিদ্যুৎ কান্তি পাল।