বড়াইগ্রামে ভুল চিকিৎসায় চার শতাধিক ডিমপাড়া হাঁসের মৃত্যু, খামারির আর্তনাদ
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় ফজর আলী নামের এক খামারির চার শতাধিক ডিমপাড়া হাঁস মারা গেছে। শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি গতকাল শনিবার ওই খামারির সাত শতাধিক হাঁসকে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেন। আজ রোববার সকাল থেকে হাঁসগুলো মারা যেতে শুরু করে।
শরিফুল নওগাঁর ধামাইরহাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি নিজেকে পশুচিকিৎসক বলে দাবি করেন। খামারি ফজর আলী বড়াইগ্রাম উপজেলার মাঝগাঁও ইউনিয়নের পারকোল মৎস্যজীবীপাড়ার সোবাহান আলীর ছেলে। বাড়ির পাশে তাঁর হাঁসের খামার আছে।
ভুক্তভোগী খামারি ফজর আলী জানান, তাঁর খামারের হাঁসগুলোর কয়েক দিন ধরে অসুস্থ। শনিবার সকালে শরিফুল তাঁর কাছে এসে নিজেকে পশুচিকিৎসক পরিচয় দিয়ে অসুস্থ হাঁসের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি সকাল থেকে প্রায় ৭০০ হাঁসকে কলেরার চিকিৎসার জন্য ‘জেন্টামাইসিন’ ইনজেকশন দিতে শুরু করেন। বিকেল পর্যন্ত ইনজেকশন দিয়ে তিনি চলে যান। আজ সকালে তিনি খামারে গিয়ে দেখেন, বেশ কিছু হাঁস মরে পড়ে আছে। অন্য হাঁসগুলো অসুস্থ হয়ে গেছে। বেলা আড়াইটা নাগাদ তাঁর খামারের চার শতাধিক হাঁসের মৃত্যু হয়। তাঁর আশঙ্কা, বাকিগুলোও মারা যাবে। খবর পেয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের চিকিৎসকেরাও সেখানে যান।
ফজর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরিফুল আমার কাছে ভুয়া পরিচয় দিছে। সে হাঁসের রোগই চেনে না। রোগ না ধরেই সে অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিছে। ইনজেকশনের কারণে হাঁস মারা গেছে। হাঁসগুলো সব ডিম পাড়ছিল। আমি তাঁর বিচার চাচ্ছি। আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে আমি পথের ভিখারি হয়ে যাব। আমি অনেক ঋণ করে খামার করেছি।’
এ বিষয়ে কথিত পশুচিকিৎসক শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারি পড়িনি। ঠাকুরগাঁও জেলায় তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে হাঁস-মুরগির চিকিৎসা দিই। এ ছাড়া বড়াইগ্রামের জোয়াড়ি এলাকায় একটি মুরগির ফার্মে চাকরি করার সুবাদে কিছু চিকিৎসা রপ্ত করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে ফজর আলীর খামারে গিয়ে দেখি, হাঁসগুলোর কলেরা হয়েছে। তাই আমি জেন্টামাইসিন ইনজেকশন দিয়েছি। এতে হাঁসগুলো যে মারা যাবে, তা বুঝতে পারিনি।’
যোগাযোগ করলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, হাঁসের মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। সত্যিই মর্মান্তিক ঘটনা। রোগ নির্ণয় না করে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কথিত চিকিৎসক অপরাধ করেছেন। তাঁর শাস্তি হওয়া দরকার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাঁকে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। ভুক্তভোগী খামারি ক্ষতিপূরণ চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।