সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ভোজে পুলিশ কর্মকর্তারা, হাঙ্গামার পর বিএনপির নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক নেতার নৈশভোজে পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগ দেওয়ার ঘটনায় বিএনপির ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাঙ্গামা বাধলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফির হাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নৈশভোজের আয়োজক গোকুন্ডা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আখেরুল ইসলাম ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার মিরপুরে একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে গোকুন্ডা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে নয়ন (৩৬) ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হোসেনকে (২৫) লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
আহত ওই দুই ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রাতে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল মজিদ মিয়া, লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের এবং রংপুরের কাউনিয়া থানার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফি কোল্ড স্টোরেজে এক নৈশভোজে অংশ নেন। ওই কোল্ড স্টোরেজের তত্ত্বাবধায়ক আখেরুল ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগরের ঢাকনাই গ্রামের মিজানুর রহমান নামের এক যুবককে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গত ২১ আগস্ট মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলার ৬৯ নম্বর আসামি আখেরুল।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল মজিদ মিয়া সেখানে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত হন। আমি ওনার প্রটোকলে উপস্থিত ছিলাম। আখেরুল ইসলাম ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, সেটা আমার জানা ছিল না। মহাসড়ক অবরোধসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ নেয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাতে মোস্তফি কোল্ড স্টোরেজে পুলিশের অনেক গাড়ি দেখতে পেয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খোঁজখবর নিতে সেখানে যান। এ সময় আখেরুল ইসলামের সঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নৈশভোজের দৃশ্য দেখতে পেয়ে তাঁরা মুঠোফোনে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণের চেষ্টা করেন। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এ সময় সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে। এ সময় পুলিশ পাঁচ-ছয়জনকে আটকও করে। পরে গভীর রাতে তাঁদের স্থানীয় মণ্ডলের হাট এলাকায় লালমনিরহাট-পাটগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে এনে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় রাত একটার দিকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা লালমনিরহাট-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পাশের একটি চায়ের দোকান ও আখের উদ্দিনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলতাব হোসেন ব্যাপারী বলেন, হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আখেরুল ইসলামের সঙ্গে পুলিশের নৈশভোজের ছবি ওঠাতে গেলে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আখেরুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম আজ বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার আবদুল মজিদ মিয়া সেখানে আমন্ত্রিত হিসেবে উপস্থিত হন। আমি ওনার প্রটোকলে উপস্থিত ছিলাম। আখেরুল ইসলাম ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, সেটা আমার জানা ছিল না। মহাসড়ক অবরোধসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বাধ্য হয়ে পদক্ষেপ নেয়।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেকে এখানে নতুন, অনেকের রাজনৈতিক পরিচয় সেভাবে অবগত নই। আমি আজ বিকেলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত হাবিবুর রহমান ও বিপ্লব হোসেনকে দেখতে গিয়েছি। খোঁজখবর নিয়েছি।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। গতকালের ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে ওসি ডিবি এবং ওসি সদরকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করেছি। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। কমিটির সদস্যরা আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। রিপোর্ট পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’