শাহবাগে সমাবেশ: দেশে দুর্নীতির কারখানা তৈরি হয়েছে

‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।ছবি: প্রথম আলো

দেশের সব দুর্নীতিবাজকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সমাজে দুর্নীতিবাজদের একটা জোট তৈরি হয়েছে। একজন আরেকজনকে রক্ষার চেষ্টা করছেন।

আজ শনিবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অর্থনৈতিক লুটপাট, অর্থ পাচার ও দুর্নীতি রুখে দেওয়ার আহ্বানকে সামনে রেখে এ সমাবেশ করা হয়। ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ ব্যানারে আয়োজিত এ সমাবেশে বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, দেশে দুর্নীতির কারখানা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতির এই সুড়ঙ্গ এক দিনে তৈরি হয়নি। জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকায় সরকারের দুর্নীতিবাজদের প্রয়োজন হয়। সরকার তাঁদের চেনে, জানে এবং পোষে। সরকার দুর্নীতির গর্ত খুঁড়ে রেখেছে বারবার ক্ষমতায় থাকার জন্য।

ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরিফুজ্জামান বলেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইপিজি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কারণ, তিনি হয়তো কারও লেজে পাড়া দিয়েছেন। অথবা কাউকে লুটপাটের ভাগ দেননি। তা না হলে বেনজীরকে সরকার ধরত না।

বিদেশে পাচার করা আরাফাত রহমানের (কোকো) সাড়ে সাত কোটি টাকা ফেরত আনার বিষয়টি উল্লেখ করে শরিফুজ্জামান বলেন, গত ১৫ বছরে পাচার হওয়া টাকা কেন আনা যাচ্ছে না? কারণ, এটা নিয়ে রাজনীতি করা যায় না৷ দুর্নীতি নির্মূল করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।

প্রাচ্যনাট্য পরিবেশন করে পথনাটক
ছবি: সংগৃহীত

লুটপাট করে যাঁরা দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করতে চাইছেন, তাঁদের ‘নব্য রাজাকার’ বলে আখ্যা দেন যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান। বেনজীর, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির দায় সরকার এড়াতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা সালেহ আহমেদ বলেন, গুটিকয়েক দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে। তাঁদের পেছনে থাকা রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, ‘যে সরকারকে আমরা ভরসা করতাম, সেই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পুরো দেশকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছে।’

সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের সংগঠক আকরামুল হক। তিনি জানান, আগামী ১২ জুলাই শাহবাগে তাঁরা নাগরিক সমাবেশ করবেন। যে সরকারি অফিসের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে, তাদের কার্যালয়ের সামনে সামনে কর্মসূচি করার ঘোষণাও দেন আকরামুল।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান তারিক চৌধুরী, যুব ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাফিজ আদনান, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, চিকিৎসক মুজাহিদুল ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার, সাবেক সভাপতি দীপক শীল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। প্রাচ্যনাট্য পরিবেশন করে পথনাটক।