মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদারের পক্ষে কাজ না করায় ইটের দেয়াল তুলে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। আজ রোববার উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দেওয়ানকান্দি এলাকায় কাঁচা রাস্তায় ওই দেয়াল নির্মাণ করা হয়।
লৌহজংয়ের কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম দেওয়ান ওই দেয়াল নির্মাণ করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ শিকদারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় দেয়াল তোলার অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর দাবি, মানুষ চলাচলের ওই রাস্তার জায়গা তাঁর নিজের। অন্যদিকে প্রার্থী রশিদ শিকদার বিষয়টি জানেন না বলে দাবি করেছেন।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লৌহজংয়ের খড়িয়া মৌজার সিএস ও এসএ ৬৬ ও আরএস ৭২ দাগে ১০৮ শতাংশ খাসজমি আছে। দেওয়ানকান্দি গ্রামের ওই জমির পাশেই গোয়ালিমান্দ্রা খাল। স্থানীয় প্রায় ৫০টি পরিবার গৃহস্থালিসহ নানা কাজে ওই খাল ও খালের পানি ব্যবহার করেন। দেড় দশক আগে খালে যাওয়া ও খাল থেকে মূল সড়কে যাতায়াতের জন্য খাসজমিতে প্রায় ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রশস্ত একটি মাটির রাস্তা তৈরি করা হয়।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে ৯৪ হাজার টাকায় রাস্তাটি নির্মাণ করেন। খালপাড়ে বসবাস করা বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনও রাস্তাটি ব্যবহার করেন। তিন দিন আগে ওই রাস্তার মাঝে আড়াআড়িভাবে ইটের দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন পার্শ্ববর্তী কুমারভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম দেওয়ান। এতে খালপাড়ে যাতায়াত করা কয়েকটি পরিবারের ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
দেওয়ানকান্দি গ্রামের হোসেন মৃধা আক্ষেপ করে বলেন, আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার একজন প্রার্থী। তিনি পদ্মা নদীর বালু লুটসহ নানা কারণে বিতর্কিত। সেলিম দেওয়ানও বালু লুটের সঙ্গে জড়িত। তিনি রশিদের পক্ষে কাজ করছেন। তাঁদেরও কাজ করতে বলেন। তাঁরা রাজি না হওয়ায় রাস্তার খাসজমি নিজের দাবি করে ইটের দেয়াল তুলে দিয়েছেন। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান, থানা-পুলিশকে জানিয়েছিলেন। তাঁরা রাস্তা খোলা রাখতে বললেও সেলিম প্রভাব খাটিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছেন।
তবে নির্বাচনের কারণে দেয়াল তোলার অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন সেলিম দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘আমার জায়গায় আমি দেয়াল দিচ্ছি। কোনো রাস্তায় দেয়াল দিইনি।’ খাসজমি কীভাবে আপনার হলো, এভাবে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা যায় কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘ক্রয় সূত্রে মালিক হয়েছি। দুই রেকর্ড আমাদের পক্ষে, একটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে মামলা চলছে।’
সরেজমিনে গতকাল শনিবার দুপুরে দেখা যায়, রাস্তার মাঝ বরাবর ইটের গাঁথুনি দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছেন। পাশে স্থানীয় ৮-১০ জন ব্যক্তি চেয়ার পেতে কাজের তদারক করছেন। দেয়ালটি সেলিম দেওয়ান করছেন বলে তাঁরা জানান।
রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘরবন্দী হয়ে পড়েছেন শিউলি বেগম। বললেন, ‘১২-১৫ বছর আগে সেলিম দেওয়ান আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাস্তাটি করে দিয়েছিলেন। এখন তিনি আমাদের বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দিচ্ছেন। নির্বাচনে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের প্রার্থী থাকতেই পারে। এ জন্য কি রাস্তা বন্ধ করে দিতে হবে!’
হলদিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি ইউপি সদস্যদের পাঠিয়ে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। সেলিম দেওয়ান কথা শোনেননি। হিংসার বশবর্তী হয়ে এলাকাবাসীর সম্মিলিতভাবে করা রাস্তায় দেয়াল দেওয়া হয়েছে। কাজটি নিন্দনীয়।’
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ শিকদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পক্ষে কাজ না করায় কেউ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন—এমন কিছুই তিনি জানেন না। সেলিম দেওয়ান অনুসারী কি না জানতে চাইলে বলেন, নির্বাচনের সময় অনেকেই কাজ করেন। সেলিম এমন কোনো কাজ করতে পারেন না। একপর্যায়ে তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন, সেটি সরকারি জায়গায় হোক অথবা কারও ব্যক্তিগত জায়গায় হোক, কেউ তা বন্ধ করতে পারবেন না। রাস্তা বন্ধের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’