কোটা বাতিলের দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালেয় প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল, মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দাবিতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মহাসড়কে এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় সড়কের দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়।

রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ম্যুরালের সামনে প্লাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন এবং জাতীয় পতাকা নিয়ে জড়ো হন শতাধিক শিক্ষার্থী। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।

অবরোধ চলাকালে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করেন।

অবরোধ চলাকালে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। তারা সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গান, জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম করতে থাকেন তাঁরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী ফুটবল নিয়ে মহাসড়কের মধ্যে খেলতে থাকেন।

কর্মসূচি চলাকালে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’, ‘স্বাধীন এই বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘১৮ সালের পরিপত্র, পুনর্বহাল করতে হবে’, ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’—এ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বলেন, চাকরি পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষাসহ সবখানে কোটার ছড়াছড়ি। এর ফলে মেধাবীদের বঞ্চিত করে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা এসব ক্ষেত্রে সুবিধা নিচ্ছেন। এ বৈষম্য মানা যায় না। এ আন্দোলন একেবারে কোটা বাতিলের দাবিতে নয়। তাঁদের দাবি, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কোটা রেখে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।

কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালেয় প্রধান ফটকের সামনে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’  ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বে থাকা কমিটির অন্যতম সদস্য এস এম সুইট। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছিল। আবারও যদি কোনো ঘোষণা আসে, তবে সেটা বাস্তবায়ন করা হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী রোকসানা খাতুন বলেন, ‘আমার নারী কোটা রয়েছে। এমনকি আমার পোষ্য কোটাও রয়েছে। তারপরও আমি আন্দোলনে নেমেছি। আমার কোনো কোটা লাগবে না। জাগ্রত বিবেক থেকে রাজপথে এসেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত বৈষম্য দূর হবে না ততক্ষণ রাজপথেই থাকব।’

দুই ঘণ্টা অবরোধ শেষে বেলা দেড়টার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর চলে যান। এ সময় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় তিন কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগ পোহান যাত্রীরা। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষের স্থলপথের একমাত্র যোগাযোগের মহাসড়ক এটি। একই দাবিতে গত বুধবার ২৫ মিনিট ও শনিবার ৩০ মিনিট মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।