ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিআরটিএ স্বীকৃত লাইসেন্স না দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
বরিশালে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকেরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। আজ শনিবার দুপুরে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে বিআরটিএর স্বীকৃত লাইসেন্স প্রদান, মহাসড়কে সাইড লেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণ, ট্রাফিক মামলা-হয়রানি বন্ধ ও সিটি করপোরেশনের টোকেনপ্রথা বাতিলের দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে তাঁরা নগরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এ সময় সমাবেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব বাসদ নেতা মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত যানবাহনের আধুনিকায়ন, লাইসেন্স, মহাসড়কে সাইড লেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্ট্যান্ডের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে যেখানে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।’
মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘সারা দেশে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ৪০ লাখ চালক রয়েছে। এই ৪০ লাখ শ্রমিকের সঙ্গে জড়িত তাঁদের পরিবারসহ প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষ। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের পাশাপাশি ৪২ জন রিকশাশ্রমিক স্বৈরাচারের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। অথচ তাঁদের জীবিকার নিরাপত্তা দিতে বিআরটিএ স্বীকৃত লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। তাঁদের প্রতিনিয়ত হয়রানি-চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে। এটা গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাবিরুদ্ধ। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, এই বিশাল শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নিয়ে এ ধরনের আচরণ আমরা মেনে নেব না।’ প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন মনীষা চক্রবর্তী।
সংগ্রাম পরিষদের বরিশাল জেলা শাখার প্রধান সংগঠক সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল মল্লিকের সভাপতিত্বে সমাবেশ আরও বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন খোকন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলার সদস্য গাজী মোহাম্মদ বেল্লাল হোসেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট বরিশাল জেলার দপ্তর সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বরিশাল রিকশা-ভ্যান চালক-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল শেখ, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলী খান, দপদপিয়া ইউনিয়নের সভাপতি রমজান আকন, জেলখানার মোড় স্ট্যান্ডের সভাপতি আবদুল মান্নান, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আরিফ, সোনারগাঁও টেক্সটাইল সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন ২০১০ সালের টোকেনের নবায়ন দিয়েছে। সিটি করপোরেশনের এই ঘোষণা সড়কে প্রকৃত ইজিবাইক চালকদের প্রতি বৈষম্য বাড়াবে। এই সব টোকেন বাণিজ্যে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা জড়িত ছিল। তাদের কাছে সাধারণ চালকেরা জিম্মি ছিল। ফলে এই টোকেন ব্যবসা শুধু বিশৃঙ্খলাই তৈরি করবে। অবিলম্বে এই সব টোকেন বাতিল করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে নগরের প্রকৃত চালকদের নম্বরপ্লেট দেওয়ার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, একমাত্র ২০২৪ সালে সরকার ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী বিআরটিএ স্বীকৃত লাইসেন্স দেওয়ার মধ্য দিয়েই সড়ক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে মহাসড়কে সাইড লেন নির্মাণ ও নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পার্কিং স্ট্যান্ড নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে নগরের যানজটসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এ সময় তাঁরা, ট্রাফিক পুলিশের মামলার হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতা বন্ধেরও দাবি জানান।