খালাতো বোনের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে স্কুলছাত্রীকে হত্যা
নরসিংদীর মনোহরদীতে দিনদুপুরে বাড়িতে ঢুকে দশম শ্রেণির ছাত্রী আনিকা আলমকে (১৫) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে আনিকার বাবা মো. শাহজাদা নূরে আলম বাদী হয়ে মনোহরদী থানায় এ হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় শাহরিয়ার শাহজাহান ফারদিন (২১) নামের এক তরুণকে প্রধান ও তিন-চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার বাসিন্দা শাহরিয়ার আনিকার খালাতো বোনকে বিয়ে করার জন্য পারিবারিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তার আনিকার খালার পরিবার ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষোভ থেকে শাহরিয়ার তাঁর সহযোগীদের নিয়ে বাসায় এসে আনিকার খালা পাপিয়া সুলতানাকে কুপিয়ে আহত করেন। এ সময় আনিকা খালাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও কোপানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আনিকার মৃত্যু হয়।
গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে মনোহরদী সরকারি কলেজ রোডের আব্দুস সাত্তার মাস্টারের বাড়িতে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। খবর পেয়ে মনোহরদী থানার পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে আনিকার রক্তাক্ত লাশ ও রক্তমাখা একটি চাপাতি উদ্ধার করে। আজ বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে আনিকার লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শাহরিয়ার শাহজাহান ফারদিন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী কামারকান্দি এলাকার শাহজাহান কিবরিয়া ও নাজাত সুলতানা রিপা দম্পতির ছেলে। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
শাহরিয়ার শাহজাহান ফারদিনের সঙ্গে আনিকার খালাতো বোনের (পাপিয়া সুলতানার মেয়ে) পরিচয় হয়। এ সুবাদে ওই তরুণসহ তাঁর পরিবারের লোকজন সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে আসেন। বিয়ের ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন পাপিয়া সুলতানা।
নিহত আনিকার বাবা মো. শাহজাদা নূরে আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাড়ি বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামে। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই কর্মসূত্রে উপজেলার বাইরে থাকায় আনিকা তাঁর খালা পাপিয়া সুলতানার বাড়িতে থেকে কৃষ্ণপুর টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে দশম শ্রেণিতে পড়ত। ওই প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকতা করেন পাপিয়া সুলতানা।
আহত পাপিয়া সুলতানার বরাত দিয়ে শাহজাদা নূরে আলম বলেন, এক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শাহরিয়ার শাহজাহান ফারদিনের সঙ্গে আনিকার খালাতো বোনের (পাপিয়া সুলতানার মেয়ে) পরিচয় হয়। এ সুবাদে ওই তরুণসহ তাঁর পরিবারের লোকজন সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে আসেন। বিয়ের ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন পাপিয়া সুলতানা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা চলে যান। গতকাল দুপুরে আনিকা বাসায় ছিল। তবে তার খালা পাপিয়া সুলতানা কর্মস্থলে ও তাঁর মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করতে নরসিংদীতে ছিলেন। দুপুরে শাহরিয়ার সঙ্গে তিন-চারজনকে নিয়ে ওই বাড়িতে যান। আনিকা পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাঁদের বসতে দিয়ে কল করে খালাকে জানান। পাপিয়া সুলতানা দ্রুত বাড়িতে আসার পর তাঁর কাছে ওই তরুণ ‘কেন বিয়ে দেবেন না’ জানতে চান। এ সময় প্রায় ১৫ মিনিট তাঁদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে পাপিয়া সুলতানা তাঁদের ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শাহরিয়ার সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতর থেকে ধারালো চাপাতি বের করে পাপিয়া সুলতানার মাথায় ও বাঁ হাতে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। এই দৃশ্য দেখে খালাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে ওই তরুণ আনিকার গলার বাঁ পাশে, বাঁ চোয়ালে, বাঁ হাতের কবজিতে, ডান হাতের আঙুলে ওই চাপাতি দিয়ে উপর্যুপরি কোপান। এতে ঘটনাস্থলেই আনিকার মৃত্যু হয়।
এ সময় পাপিয়া সুলতানা রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে চিৎকার শুরু করেন। তবে ওই তরুণেরা কৌশলে পালিয়ে যান। আরজু মিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি পাপিয়া সুলতানাকে উদ্ধার করে দ্রুত মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জুয়েল হোসেন জানান, বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত তরুণদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নিহত ছাত্রীর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহত নারীর চিকিৎসার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।