কালকিনিতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বোমা বিস্ফোরণ, বাবা–ছেলেসহ নিহত ৩
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় হাতবোমার আঘাতে একজন ইউপি সদস্য, তাঁর ছেলে ও একজন দিনমজুর নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। আজ শুক্রবার ভোরে উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের মধ্যেরচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মধ্যেরচর এলাকার মতিউর রহমান শিকদারের ছেলে আক্তার শিকদার (৪২), আক্তার শিকদারের ছেলে মারুফ শিকদার (২০) এবং খুনেরচর গ্রামের সিরাজুল চৌকিদার (৩৫)। আক্তার শিকদার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ছিলেন। আর সিরাজুল পেশায় কৃষক ও দিনমজুর ছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যেরচর এলাকায় ফকির ও শিকদার বংশের লোকজনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এলাকা ছাড়েন আওয়ামী লীগ নেতা আক্তার শিকদার। আজ ভোররাতে শরীয়তপুরের নতুনবাজার এলাকা দিয়ে আক্তার শিকদার তাঁর লোকজন নিয়ে মধ্যেরচর এলাকায় প্রবেশ করছেন, এমন খবর পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে জড়ো করেন জলিল ফকিরের লোকজন। পরে আক্তার ও জলিলের লোকজন দেশী অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। হাতবোমার আঘাতে ইউপি সদস্য আক্তার শিকদার ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বোমায় গুরুতর আহত হন তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার (২০)। মারুফকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। আর সিরাজুল চৌকিদারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা বরিশালের মুলাদি ও শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাঁশগাড়ী এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা অমিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে মারুফ নামের একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর শরীর রক্তাক্ত ছিল। শরীয়তপুরে ময়নাতদন্তের জন্য বলা হলেও স্বজনেরা লাশটি মাদারীপুরে নিয়ে গেছেন।’
বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত আক্তার মেম্বারের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা আছে। এর মধ্যে ৫টি হত্যা মামলা। সরকার পতনের পর এলাকা ছাড়ার পর সে আজ ভোরে নতুন করে দলবল নিয়ে আবার এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে। মধ্যেরচর এলাকার লোকজন তাঁদের প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। বোমা বিস্ফোরণে আক্তার ও তাঁর ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি। এ ঘটনায় আরও অনেকেই হতাহত। যারা হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানাই।’
শিকদারদের সঙ্গে ফকির বংশের লোকজনের দীর্ঘ বিরোধের কথা জানিয়ে মধ্যেরচর এলাকার বাসিন্দা রাজন হোসেন বলেন, ভোরে আক্তার শিকদার ও তাঁর দুই শতাধিক লোক প্রথমে জলিল ফকির, মোকলেস ফকির, মিজান আকন, শাহাবুদ্দিন ফকির, লাটু ব্যাপারী, বশার ব্যাপারী, আলী সরদারের বাড়িতে হামলা চালান। পরে তাঁরা একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়লে শিকদাররা পালান। তিনি আরও বলেন, মধ্যেরচর এলাকাটি শরীয়তপুর, বরিশাল ও মাদারীপুর জেলার সীমান্ত এলাকা। মধ্যেরচরে মারামারি বাধলে শরীয়তপুরের নতুনবাজার ও বরিশালের মুলাদি এলাকার লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির আজ দুপুর একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষে একপক্ষেরই তিনজন মারা গেছেন। বাবা-ছেলের পরে তাঁদের অনুসারি সিরাজুল চৌকিদার নামে একজন ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা গেছেন। এ ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনায় আসামিদের ধরতে পুলিশের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। ওই এলাকায় আবার সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী নিয়োজিত আছে।’