গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র বাঁধের ২৪ স্থানে ধস, মেরামতের উদ্যোগ নেই

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মাটি সরে ফাটল দেখা দিয়েছে। বুধবার দুপুরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২৪টি স্থানে ধস দেখা দিয়েছে। ভারী বৃষ্টির কারণে বাঁধের মাটি সরে গেছে। ধস দেখা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল করছে; কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। এতে নদী-তীরবর্তী এলাকার মানুষ ভাঙনের দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।

 বর্ষার ভরা মৌসুম শুরুর আগেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনের গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান। তিনি বলেন, বর্ষার আগে শুকনা মৌসুমে বাঁধগুলো মেরামত করলে মজবুত ও টেকসই হতো। বর্ষার সময় কাজ করলে তা স্থায়ী হয় না। তবে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থানের মাটি ধসে গেছে। জরুরিভাবে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যা থেকে গাইবান্ধা জেলাকে রক্ষা করতে মোট ২৪০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে নির্মিত। ১৯৬২ সালে নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ এ বাঁধ জেলার চারটি উপজেলার ভেতর দিয়ে গেছে। এটি উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন থেকে সদর ও ফুলছড়ি হয়ে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত। বাঁধটি চলাচলের রাস্তা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও বাঁধটি টেকসইভাবে সংস্কার করা হয়নি।

 স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ২৪টি স্থানে মাটি সরে ধস দেখা দিয়েছে। সেগুলো হলো সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট, শ্রীপুর ইউনিয়নের চাপরা, গোয়ালপাড়া, উত্তর শ্রীপুর, চণ্ডীপুর ইউনিয়নের কামারের ভিটা, লালচামার, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া; সদর উপজেলার মালিবাড়ি ইউনিয়নের বারবলদিয়া, কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট, কামারজানি বাজার, গিদারি ইউনিয়নের বাগুরিয়া, ধুতিচোরা; ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি, কাইয়ারহাট, উড়িয়া ইউনিয়নের পাকারমাথা, হাওয়া ভবন, হাজিরহাট, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, ফুলছড়ি সদর ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের পবনতাইর, পূর্ব ঝড়াবর্ষা, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের খেয়াঘাট, বাদিনারপাড়া, সাঘাটা সদর ইউনিয়নের হাসিলকান্দি।

বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ী এলাকায় বাঁধ বেহাল। ভারী বৃষ্টির কারণে বাঁধের মাটি সরে ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধের নিচ থেকে মাটি কেটে ওপরে ফেলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। বাঁধের বেশির ভাগ জায়গায় নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ বসতি স্থাপন করেছেন।

 গোয়ালবাড়ী এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিতে মাটি সরে যাওয়ায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বাঁধের কাঁচা রাস্তা দিয়ে ট্রলি চলাচল করায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ জন্য বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়েও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

 একই এলাকার ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি ক্ষয়ে গেছে। কখনো স্থায়ীভাবে মেরামত করা হয়নি। বাঁধটির অনেক জায়গা নিচু ও সরু হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় সাইকেল-মোটরসাইকেল ছাড়া ভ্যান চলাচল করতে পারে না।

সদরের কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট গ্রামের সংস্কৃতিকর্মী সাদ্দাম হোসেন বলেন, নদীতে সহায়সম্বল হারানোর পর বাঁধে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বাঁধটি শুধু বন্যানিয়ন্ত্রণই করছে না, আশ্রয়হীন মানুষের আবাস্থল হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে; কিন্তু সময়মতো সংস্কার না করায় অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধের মাটি ধসে গেছে। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধ জেলা শহরকে রক্ষা করছে; কিন্তু দীর্ঘ দিনেও টেকসইভাবে মেরামত করা হয়নি। শুধু বন্যা এলে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলা হয়।

 পাউবোর গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক দাবি করেন, বাঁধের ৮ থেকে ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কাজ করা হবে।