সিলেট নগরে নির্ধারিত নতুন গৃহকরকে ‘অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত’ সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন চার বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলছেন, একলাফে কয়েক শ গুণ গৃহকর (হোল্ডিং ট্যাক্স) বাড়ানোর বিষয়ে নগরবাসী ক্ষুব্ধ। নগরবাসীর সেবা প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের এমন ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন’ সিদ্ধান্তে সবাই হতবাক। দ্রুত সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত।
পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। এরপর নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিলের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শুরু করে।
গৃহকর নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম আলো সিলেটের চার বিশিষ্ট নাগরিকের প্রতিক্রিয়া জানতে চায়। চারজনের একজন হচ্ছেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম। নতুন গৃহকর প্রকাশের পরপরই এর প্রতিবাদে আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’ নামে যে সংগঠন গঠিত হয়েছে, এর আহ্বায়কও তিনি। এমাদ উল্লাহ বলেন, ‘অংশীজনদের কোনো মতামত না নিয়ে, তাঁদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা না করেই সিটি করপোরেশন একতরফাভাবে অতি উচ্চহারে গৃহকর নাগরিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমরা মনে করি, এটা অন্যায্য ও অনৈতিক এবং জনস্বার্থের পরিপন্থী। এটা অনতিবিলম্বে বাতিল করা উচিত।’
সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী কিম বলেন, ‘পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে রূপান্তর সত্ত্বেও সিলেট মহানগরে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার এমন কোনো উন্নয়ন সাধিত হয়নি। নাগরিক আন্দোলনের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি, সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছে উত্থাপন করা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবিদাওয়া এখনো অপূর্ণ রয়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে গত দেড় দশক ধরে নাগরিক জীবনে বরং ভোগান্তি অব্যাহত আছে। এ অবস্থায় কাণ্ডজ্ঞানহীন গৃহকর নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশন নাগরিকদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। একলাফে গৃহকর ২০০ থেকে ১০০০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন এই গৃহকর বিষয়ে সিটি করপোরেশনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি ও নির্ধারণ করা গৃহকর নাগরিকদের উৎপীড়নের নামান্তর।’
বিশিষ্ট কবি ও গবেষক এবং লিডিং ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, ‘এবারের গৃহকর নির্ধারণের পর নগরবাসীর মধ্যে নানামুখী বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেছি। নগর ভবনের প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভুক্তভোগী হিসেবে, কিছুটা নাগরিক দায়িত্ব থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডেও কর নির্ধারণী কাগজপত্র দেখে বুঝেছি, এতে নানা অসংগতি রয়েছে। এ ছাড়া কোনো স্পষ্ট নির্দেশিকা মানা হয়েছে বলেও মনে হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়র তাঁর ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতিমধ্যে নগরবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করেছেন। আশা করি, এ ক্ষেত্রেও নগরবাসীর যৌক্তিক দাবির কথা বিবেচনায় রেখে চলমান আদেশ বাতিল করে যথাযথ বিশেষজ্ঞদের মতের ভিত্তিতে এর একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান করবেন।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উচ্চ আদালতের আইনজীবী সুদীপ্ত অর্জুন বলেন, ‘হঠাৎ সিটি করপোরেশন জনগণের ওপর যে অসহনীয় গৃহকরের বোঝা চাপিয়ে দিতে চাইছে, তা শুধু অযৌক্তিকই নয়; বরং আইন ও গণবিরোধী। জনগণের সেবার কথা বলে তাদের ওপরই একলাফে হাজার গুণ করারোপ করা স্পষ্টতই জনস্বার্থবিরোধী। যেকোনো কর নির্ধারণের প্রক্রিয়া অবশ্যই স্বচ্ছ, যথাযথ নিয়ম মেনে এবং আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে জনস্বার্থে নির্ধারণ করতে হবে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের আশঙ্কা ও অসন্তোষ দূর করবেন।’