নওগাঁয় দলিল লেখকদের ধর্মঘটে জমি কেনাবেচা বন্ধ, ভোগান্তি
দলিল লেখকদের টানা ধর্মঘটের কারণে নওগাঁ সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হয়ে আছে জমির দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদনের কাজ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের সঙ্গে দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা রেজিস্ট্রার, সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় ও সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবন ও চত্বরে দলিল লেখকদের বসার স্থান না দেওয়ার প্রতিবাদে সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নিবন্ধিত দলিল লেখকেরা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট পালন করছেন। তাঁরা দলিল লেখার কাজ বন্ধ রাখায় জমি বেচাকেনা হচ্ছে না। রেজিস্ট্রার ভবন ও চত্বরে সেরেস্তা চেয়ে সদর উপজেলা দলিল লেখকদের সমিতির পক্ষ থেকে জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার দলিল লেখকদের রেজিস্ট্রার ভবন ও চত্বরে তাঁদের বসার স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানান। সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি মহাপরিদর্শক নিবন্ধনকেও (আইজিআর) জানানো হয়।
টানা ধর্মঘটের কারণে দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদন বন্ধ থাকায় ১৪ কার্যদিবসে সরকার প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে বলে নওগাঁ সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দলিল লেখকদের কোনো উপস্থিতি নেই। চারতলা ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলায় গুটিকয় কর্মচারী বসে আছেন। কাজ না থাকায় তাঁরা অলস সময় পার করছেন। কর্মচারীরা বলেন, দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে দলিল জমা হচ্ছে না। দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদনের কাজ বন্ধ। দলিল লেখকেরা তাঁদের চাহিদামতো জায়গায় সেরেস্তা করতে না পারায় তাঁরা দলিল না লেখার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন ভবন নির্মাণাধীন সময়ে শহরের গোস্তহাটির মোড় এলাকায় যে ভবনে অস্থায়ীভাবে সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় করা হয়েছিল, দলিল লেখকদের সেরেস্তা এখনো সেখানেই আছে।
নওগাঁ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার উত্তরায় কিছু জমি কেনার জন্য এক পার্টির সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। সেই জমি কেনার জন্য নওগাঁয় বসতবাড়ির কিছু জমি বিক্রি করতে হবে। জমি বিক্রির জন্য ক্রেতাও ঠিক হয়েছে। কিন্তু দলিল লেখকেরা কেউ দলিল লিখতে চাইছেন না। ১৫ দিন ধরে দলিল লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কবে এই অচলাবস্থার শেষ হয়।’
সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের দীঘিরহাট গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুন নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘হামার বড় বেটার সৌদি আরবে কাজ ঠিক হয়েছে। ভিসার কামও সব শ্যাষ হয়েছে। প্লেন ভাড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য কিছু জমি বিক্রি করা দরকার। কিন্তু আজ ১৮-২০ দিন ধরে সেই কামটাই হছে না। দলিল লেখকদের কী হইছে, কেউই দলিল লিখতে চায় না। অ্যাখন হামরা কোনো দিশামিশা পাছি না।’
ধর্মঘটের বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. ওয়াজারাত হোসেন (টিপু) বলেন, ‘যখন পুরোনো সাবরেজিস্ট্রার ভবন ছিল, তখন আমরা সাবরেজিস্ট্রার চত্বরেই বসতাম। সাবরেজিস্ট্রার ভবনের চারপাশে বাউন্ডারি ছিল, আমরা সেই বাউন্ডারির সেই দেয়াল ঘেঁষে বসতাম। নতুন যে ভবন করা হয়েছে, সেই ভবনে জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়। নতুন ভবনের সামনে বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। আগের মতো সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনের চত্বরে আমরা আমাদের সেরেস্তা করতে চাইলে সাবরেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার আমাদের বাধা দেন। এখন আমাদের নানা ধরনের আইনের যুক্তি দেখাচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা রেজিস্ট্রার শরিফ তরফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা রেজিস্ট্রার ও সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় একটি সরকারি অফিস। দলিল লেখকেরা সরকারি কোনো কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা নন। আইন অনুযায়ী, একটা সরকারি কার্যালয়ে দলিল লেখকদের সেরেস্তা করতে দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর নেই। তাঁরা যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের দাবি অনুযায়ী সেরেস্তা করতে দেওয়া যাবে।’