যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলার মামলার আসামি

দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বগুড়ার সাতমাথা এলাকা। ১৮ জুলাই দুপুরে
ফাইল ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্রে করে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় রেজভী আহমেদ নামের এক তরুণকে আসামি করা হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, এ ঘটনার সঙ্গে ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও তাঁর নেই। ঘটনার দিন তিনি বাসাতেই ছিলেন।

১৬ জুলাই বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান বাদী হয়ে ২৩ জুলাই বিস্ফোরক আইনে ৮৭ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে ৮৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে রেজভী আহমেদকে। রেজভী বগুড়া শহরের খান্দার এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার মেলিনিয়াম স্কলাস্টিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ২০১৯ সালে পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার জন্য চীনে যান রেজভী আহমেদ। চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পাসের পর এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে ফেরেন। বৃত্তিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের লামার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘অফার লেটার’ পেয়েছেন তিনি। ভিসার জন্য অপেক্ষায় থাকা রেজভী বিস্ফোরক মামলার আসামি হয়ে এখন গ্রেপ্তার–আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

রেজভী আহমেদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি শিক্ষার্থীদের মিছিলেও অংশ নেননি। ১৬ জুলাই সারা দিন বাসাতেই ছিলেন। আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। তা ছাড়া সরকারি চাকরি করার ইচ্ছেও তাঁর নেই। এমএসসি শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রেই কিছু একটা করার ইচ্ছে আছে তাঁর। অথচ হয়রানি করতে তাঁকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার মামলার আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘৭১ থেকে ৮৭ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ কার্যালয়সংলগ্ন টাউন ক্লাবের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে আশ্রয় নেওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের এলোপাতাড়ি মারধর করেছেন।’

রেজভী আহমেদ বলেন, ‘সাতমাথায় সহিংসতার সময় অনেক সিসি ক্যামেরা সচল ছিল। সহিংসতার সময় সাতমাথায় আমার উপস্থিতি প্রমাণ করতে পারলে নিজে থেকেই আদালতে আত্মসমর্পণ করব। আদালত যে শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব।’

এ বিষয়ে মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্ত করেছেন দলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা যাদের যাদের নাম দিয়েছেন তাঁদেরকেই আসামি করা হয়েছে। এখন কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী কিংবা নিরপরাধ কেউ আসামি হয়ে থাকলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর নাম বাদ দিয়েই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন, এ বিষয়ে তদন্তে কোনো দলীয় প্রভাব বিস্তার করা হবে না।

আরও পড়ুন

এই মামলার এজাহারে বগুড়া পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৮৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর বাইরে একই মামলায় বগুড়ার মিলেনিয়াম স্কলাসটিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির প্রস্তুতিতে থাকা লায়লাতুন নাজিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাকি তাজওয়ার, ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সেউজগাড়ি বন্দর কমিটির সম্পাদক শাওন পাল ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এজাহারে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ‘নিরপরাধ’ ব্যক্তিদের আসামি করার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্ত করেছেন দলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা যাদের যাদের নাম দিয়েছেন তাঁদেরকেই আসামি করা হয়েছে। কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী কিংবা নিরপরাধ কেউ আসামি হয়ে থাকলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাঁর নাম বাদ দিয়েই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন, এ বিষয়ে তদন্তে প্রভাব বিস্তার করা হবে না।

এদিকে মামলার ২ নম্বর আসামি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারকে ২৩ জুলাই গ্রেপ্তারের পর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য না করে আলী আজগরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা আলী আজগর তালুকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালত রিমান্ড শুনানির জন্য এখনো দিন ধার্য করেননি।

১৭ থেকে ২৭ জুলাই—১১ দিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘিরে বগুড়া সদর থানায় ১৪ এবং শেরপুর থানায় একটিসহ ১৫ মামলায় ২৯৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১ হাজার ৩০০ জনকে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২৯ জনকে।