পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে টেকনাফের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত
কক্সবাজারের টেকনাফে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার প্রায় ৮ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
পাহাড়ধসে প্রাণহানি রোধে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়েছে। এতে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়েছে, তবে এখন পর্যন্ত পাহাড়ে বসবাসকারীদের কোনো বাসিন্দা যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসের ঝুঁকি বাড়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে সাবরাং ছাড়া বাকি চারটি ইউনিয়ন পাহাড়ে ঘেরা। উপজেলার ২০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানান, গতকাল দুপুর ১২টা থেকে আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর টেকনাফে শুধু ৬ ঘণ্টায় হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
প্রবল বর্ষণে টেকনাফ উপজেলায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮টি গ্রাম, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভার ৭টি গ্রাম, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম, সাবরাং ইউনিয়নের ৭টি গ্রাম, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
জলাবদ্ধতার জন্য পানি নিষ্কাশনের সমস্যাকে দায়ী করেছেন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের পানি মূলত স্লুইচগেট থেকে বের হতে না পারায় বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে তাঁর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের ৪ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। টেকনাফ-কক্সবাজার আঞ্চলিক সড়কের রঙ্গিখালী-আলীখালী নামক এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে তিনি জানান।
টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়াপাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কায়ুকখালীয়াপাড়া এলাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে প্লাবিত হয়েছে বলে জানান টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, এই সাত গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে সদর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হলো মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া, রাজারছড়া। এসব এলাকার ফসলি জমি ও বসতঘর হাঁটু ও কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে।
ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণের ফলে কিছু গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। আমরা তাদের খোঁজখবর নিচ্ছি। পাশাপাশি অতি ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’