হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করে চাঁদা আদায়, ১১ বছর পর এএসপি-ওসির বিরুদ্ধে মামলা

মামলাপ্রতীকী ছবি

সাতক্ষীরায় চাঁদার জন্য বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ১৭ দিন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রেখে নির্যাতনের পর ১৩ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগে ১১ বছর পর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার মৃগিডাঙা গ্রামের এরশাদ আলী বাদী হয়ে সদর আমলি আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক নয়ন কুমার বড়াল অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আইনজীবী ইকবাল হাসান মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন তৎকালীন এএসপি (সদর সার্কেল) কাজী মনিরুজ্জামান, সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদ হোসেন, ডিবি পুলিশের তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কাশেম, আবুল কালাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কাজী এমরান, পাইক দেলোয়ার হোসেনসহ মৃগিডাঙা গ্রামের ১১ জন বাসিন্দা। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি একজন মুদিদোকানি। তাঁর মাছের ঘেরও আছে। ২০১৩ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে আসামিরা তাঁর কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে না চাইলে ওই বছরের ১১ মার্চ দুপুরে মৃগিডাঙা গ্রামের আলী হোসেন, নুরুল আমিনসহ ১১ জন তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলেন। তাঁদের সহযোগিতায় পুলিশ তাঁর হাতে হাতকড়া লাগিয়ে ভ্যানে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রাখে। স্বজনেরা ডিবি কার্যালয়ে গেলে তাঁরা কিছুই জানেন না বলে জানানো হয়। পুলিশের হেফাজতে এসআই আবুল কাশেম বাদীর কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আট দিন নির্যাতনের পর তাঁরা স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে টাকা আনার কথা বলতে বলেন।

আরজিতে আরও বলা হয়, টাকা না দিতে পারায় ২৪ মার্চ রাত আটটার দিকে আবুল কাশেম লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ডান হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে দেন। আঙুলের নখ তুলে নেওয়া হয়। এরপরও টাকা দিতে রাজি না হলে ২৫ মার্চ ভোরে ডিবি হেফাজত থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে এনে পিস্তল দিয়ে ডান হাতে গুলি করে। এরপর কয়েকজন আসামি তাঁর স্ত্রীকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাঁর করুণ পরিণতি দেখান। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ১৩ লাখ টাকা দিলে ২৮ মার্চ সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ২২ দিন তিনি সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন বাদী।