৭ দিন পর টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌ চলাচল শুরু, নাফ নদীতে ‘মিয়ানমারের জাহাজ’
বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তা পাহারায় কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যাতায়াতকারী নৌযান লক্ষ্য গুলিবর্ষণের সাত দিন পর আজ বৃহস্পতিবার সার্ভিস ট্রলারে যাতায়াত করেছেন মানুষ। তবে পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছাড়েনি।
এদিকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে নাফ নদীর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ার বিপরীতে মিয়ানমারের নিকটবর্তী দেখা মেলে একটি বড় আকারের জাহাজ। আজ সকালের পর সেই বড় জাহাজ দক্ষিণ দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে টেকনাফের নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ বদরমোকাম এলাকার বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া পয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে। জাহাজটি মিয়ানমারের নৌবাহিনীর বলে দাবি করছেন সীমান্তের লোকজন। ওই জাহাজ থেকে মিয়ানমারের স্থলভাগে থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল বর্ষণের শব্দ অব্যাহত রয়েছে। জাহাজটি নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিজিবি ও কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টরা সজাগ রয়েছেন।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাহাজটি গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মৌলভীপাড়ার বিপরীতে দেখা গেছে। এরপর বুধবার রাত ৯টা থেকে এপারে ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। টানা ৩ ঘণ্টা বিকট আকারের শব্দ শুনেছেন সীমান্তের লোকজন। এরপর থেমে থেমে রাতভর শব্দ শোনা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত আবারও বিকট শব্দ পাওয়া যায়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, আজ দুপুর ১টার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেটিঘাট থেকে ৩টি ট্রলারযোগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। বেলা ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে পৌঁছায়। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে লোকজনকে সরাসরি কূলে ওঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরে কূল থেকে কয়েকটি ডিঙিনৌকা উপকূলের কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারী ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙিনৌকায় তুলে কূলে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব দেখভালের জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলীর নেতৃত্বে একটি দল সেখানে কাজ করছে।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, গত সাত দিন আসা-যাওয়া বন্ধ থাকায় দ্বীপে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এখন বিকল্পভাবে ট্রলার চলাচল শুরু হওয়ায় স্বস্তি মিলছে। যে ট্রলারগুলো গেছে, ওই সব ট্রলার নিয়ে টেকনাফে থাকা মানুষ ফিরে আসবে।
এর আগে ৮ জুন দুপুরে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনগামী পণ্যবাহী একটি ট্রলারে ৩০-৪০টি গুলিবর্ষণ করে মিয়ানমার সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাতে কেউ হতাহত না হলেও ট্রলারটির বিভিন্ন স্থানে সাতটি গুলি লাগে। এ ঘটনায় বন্ধ রাখায় হয় নৌযান চলাচল।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জরুরি সভায় বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া এবং পণ্যবাহী ট্রলার চলাচল শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে আজ যাত্রী পারাপার শুরু হলেও পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে টেকনাফ ছাড়েনি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, মূলত কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে বড় জাহাজযোগে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে যাবেন। এটা ব্যবসায়ী এবং জাহাজমালিকেরা মিলে করবেন। প্রশাসন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে। এ ছাড়া এখন বঙ্গোপসাগর হয়ে যে ট্রলার যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করছে, ওখানে কিছু পণ্য নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফলে খাদ্যসংকট হবে না।
মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘নাফ নদীতে একটি বড় জাহাজের অবস্থান এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনার বিষয়টি জেনেছিন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সর্তক অবস্থানে রয়েছি আমরা।’