হিরো আলম শঙ্কামুক্ত, হামলার নিন্দা জানিয়ে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন
বগুড়ার আদালত প্রাঙ্গণে হামলার শিকার আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম বর্তমানে শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁকে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদিকে হিরো আলমের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। হামলার জন্য ঢালাওভাবে বিএনপিকে দোষারোপ করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
এর আগে আজ রোববার বেলা ১১টার পর মামলা করে বের হওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা তাঁকে কিলঘুষি মারার পর চ্যাংদোলা করে আদালত প্রাঙ্গণে বের করে মারধর করেন। পরে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করানো হয়। হামলার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে হিরো আলম বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হয়েছিলাম। এবার হামলা করল বিএনপি।’ পরে তাঁকে উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিরো আলমের শরীরে ফোলা-জখম রয়েছে। এ জন্য তাঁকে সার্জারি (পুরুষ) বিভাগে ভর্তি করে ২৪ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
এ ঘটনায় বিকেলে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। হিরো আলমের বিরুদ্ধে বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নন।’ তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই হিরো আলম বিএনপিকে হামলার জন্য দায়ী করায় তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হামলার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত না থাকলেও দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে ষড়যন্ত্রকারীরা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সব জায়গায় বিএনপিকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করা হচ্ছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের নেতা (তারেক রহমান) দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, কেউ যাতে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন। কেউ যদি অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত হন, তবে সরাসরি তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। ইতিমধ্যে আমরা সেই নজির রেখেছি।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার ভিডিও দেখেছি। সেখানে বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতা উপস্থিত ছিলেন না। তিনি (হিরো আলম) না জেনেই বিএনপিকে দোষারোপ করেছেন, বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যেকোনো ঘটনা ঘটলে অহেতুক বিএনপির ওপর দায় চাপানো একশ্রেণির মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনের পর বিএনপির হামলার অভিযোগ অস্বীকারের বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘হামলাকারীরা মারধর ও কান ধরে ওঠবস করানোর সময় বারবার ধমক দিয়ে বলছিলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেছিস। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিস।’ তিনি জেলা বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘হামলাকারীরা বিএনপির লোক না হলে কেন তারেক রহমান ও রুহুল কবির রিজভীর কথা বলবেন?’
এর আগে হামলার পর হিরো আলম অভিযোগ করেন, তাঁর ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন বগুড়া আদালতের আইনজীবী সহকারী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রনি সরকার। হামলার কথা স্বীকার করে রনি সরকার বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলায় আমি, বগুড়া বারের আইনজীবী ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা নেতৃত্ব দিয়েছি।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ‘হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’