জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, সাঁওতালদের বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ
দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ১০-১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি ভেঙে তাঁদের অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আতঙ্কে আছে ৪০টি সাঁওতাল পরিবার। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বহ্নিশিখা। তিনি সাঁওতালদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পিপল্লা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলার তৈয়বপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে সাঁওতালরা বাড়িঘর ভাঙচুরের অভিযোগ তুলেছেন।
শনিবার সকালে পিপল্লা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, টিনের ছাউনিযুক্ত ছোট ছোট মাটির ঘর। ৪০টি পরিবারে প্রায় আড়াই শ মানুষের বসবাস। তিনটি ঘরের শুধু ভিটেমাটি পড়ে আছে। টিনের চালা নেই। সাঁওতাল নারী-পুরুষ একত্রে জড়ো হয়ে আছেন।
ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি মেরামত করা খমন ভুঞ্জার (৫৫) বললেন, ‘দেড় যুগ ধরে এখানে বসবাস করছি। এটা খাসজমি। আমাদের মণ্ডল (সাঁওতালদের মাতব্বর) ভূমি অফিসে তহসিলদারের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনিই আমাদের এখানে বাড়ি তুলতে বলেছিলেন।’
দীপালী রানী হাসদা (৪২) বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে রাতে ঘুমাইতে পারি না। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। ৪০টি পরিবার আমরা এখানে বসবাস করছি। সরকার নাকি পরিবর্তন হয়েছে। এখন নাকি আমাদের উচ্ছেদ করার সুযোগ। ওই দিন আমরা কাজে গেছিলাম। এই সুযোগে আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে। আমরা কোথায় যাব?’
বাবুল ভুঞ্জার (৬৫) বলেন, ‘জমিটা নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে। এই জন্য বিদ্যুতের লাইনটা পর্যন্ত নিতে পারি নাই। কেরোসিনের আলোয় এখনো রাত কাটে আমাদের। কত কষ্ট করে এখানে আছি। এটা তো সরকারি জমি। আমাদের জমি নাই। তাই সরকার আমাদের থাকতে দিয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিপল্লা গ্রামের পাশেই চকশিবপুর গ্রামে বড় দামুয়া নামে একটা পুকুর আছে। পুকুরের চারপাশে সাঁওতালদের বসবাস। এখনো সেখানে কয়েকটি পরিবার থাকে। ২০১৩ সালে ভূমি কার্যালয়ের তহসিলদারের সঙ্গে আলোচনা করে পিপল্লা গ্রামে ঘর তোলেন সাঁওতালরা। সেই জমির মালিক ছিলেন মৃত গফুর মোহাম্মদ শাহ। বর্তমানে জমির মালিকানা দাবি করছেন গফুর মোহাম্মদের চার ছেলে।
জমির মালিক গফুর মোহাম্মদের ছেলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপল্লায় আমাদের এক একর জমিতে সাঁওতালরা বসবাস করছেন। ২০১৩ সালে হঠাৎ তাঁরা স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির কুপরামর্শে আমাদের জায়গায় ঘর তোলেন। পরে সেটা নিয়ে বিচার সালিসও হয়। তাঁরা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছিলেন। গত মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে, এটা জানতে পেরে তাঁরা নিজেরাই বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করেন। আমরা সেখানে দেখতে যাই। তখন বিএনপির এক নেতা তাদের আমাদের বিরুদ্ধে উসকে দেয়। পরে তারা বলতে শুরু করে আমরাই বাড়িঘর ভেঙেছি। আমরা ভাঙতে যাব কেন? কোর্টে তো বিষয়টি নিয়ে মামলা চলমান।’
জানতে চাইলে ইউএনও বহ্নিশিখা প্রথম আলোকে বলেন, সাঁওতালদের বাড়িঘর ভাঙচুরের বিষয়টি জানতে পেরে থানার কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। সেখানে জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁদের আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্তের জন্য বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, এখানে একটা তৃতীয় পক্ষ আছে। তিনি সাঁওতালদের এখানে এনে বসিয়েছেন। মূলত ওই ব্যক্তির পরামর্শে সাঁওতালরা এই কাজ করছেন। সাঁওতালরা পিপল্লায় ছিলেন না। তাঁরা পাশের গ্রাম চকশিবপুরে ছিলেন।