কক্সবাজারে দুই মহল্লাবাসীর দিনব্যাপী সংঘর্ষে আহত ৬০, থমথমে পরিস্থিতি

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া বাজারে দুই মহল্লাবাসীর সংঘর্ষ। সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

ফুটবল খেলা নিয়ে মারামারির জেরে কক্সবাজার পৌরসভার দুটি মহল্লার বাসিন্দাদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। আজ সোমবার দিনব্যাপী উপকূলীয় ১ নম্বর ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় বেশ কিছু দোকানপাট, বসতবাড়ি ও যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায় সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাকিবুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিন আগে মারামারির ঘটনার জের ধরে আজ দুই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের ছোড়া ইটপাটকেলে অনেকে আহত হয়েছেন। কয়েকজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। সেখানে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষ চলার সময় সমিতিপাড়া বাজারের বেশ কিছু দোকানপাট, বাসাবাড়ি ও যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। বিকেলে সড়কের ওপরে একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলার সময় বহু নারী-শিশু আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ছোটাছুটি করেন।

১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, ঘটনার সময় তিনি এলাকায় ছিলেন না। তিন দিন আগে সমিতিপাড়া বাজার এলাকার মাঠে সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়ার মধ্যে ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তখন দুই পাড়ার কয়েকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর কুতুবদিয়া পাড়ার এক যুবক সমিতিপাড়ার বাজারে গেলে তাঁকে আটকে রেখে মারধর করা হয়। এর জের ধরে আজ সকাল ১০টার দিকে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়া বাজারে চলা সংঘর্ষ থামাতে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ মাঠে নামে। সোমবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় উপকূলীয় সমবায় সমিতির সভাপতি গোরা মিয়া বলেন, সামান্য একটি বিষয় নিয়ে আজ সকাল থেকে টানা সাত ঘণ্টাব্যাপী দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় সড়কের দুই পাশে কয়েক শ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।  সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। বেশির ভাগ ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ২০ জনকে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশ সমিতিপাড়ার বাজারের সড়ক থেকে দুই পক্ষের লোকজনকে সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। দোকানপাট খুলতে থাকে।

ইটপাটকেলের আঘাতে সমিতিপাড়ার তরুণ সরওয়ার কামালের (৩২) মাথা ফেটে গেছে। সরওয়ার কামাল বলেন, ফুটবল খেলার সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ ৬-৭ ঘণ্টা ধরে দুই মহল্লাবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গেল। পরিস্থিতি থমথমে, যেকোনো সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘর্ষে লেগে যেতে পারে।

ইটের আঘাতে আহত আরেক যুবক নুরুল ইসলাম (৩২) বলেন, কুতুবদিয়াপাড়াসহ ছয় গ্রামের হাজারো মানুষ দল বেঁধে সমিতিপাড়ার লোকজনের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়েছেন। ইটপাটকেলের আঘাতে বহু নারী শিশু আহত হয়েছেন। সমিতিপাড়ার মানুষ আতঙ্কে আছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের নাজিরারটেক উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের অন্তত ৭০০টি ছোট–বড় মহাল রয়েছে। এই ওয়ার্ডের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, বাসিন্যাপাড়া, মোস্তাইক্যাপাড়া, বন্দরপাড়াসহ অন্তত ১৮টি মহল্লায় প্রায় ৭০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস। অধিকাংশ জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে জেলার কুতুবদিয়া ও মহেশখালী থেকে আসা মানুষ। কয়েক যুগ ধরে শ্রমজীবী মানুষগুলো সরকারি খাসজমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন।