মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের খননকাজ চালু রাখার দাবি

মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের খননকাজ চালুর রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। বুধবার খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাটের মোংলা সমুদ্রবন্দরের পশুর চ্যানেল খনন প্রকল্পের বালু ফেলা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের বিরোধিতার পরিপ্রেক্ষিতে খননকাজ চালু রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন।

আজ বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটির খুলনার কমিটির নেতারা এ দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা খনন প্রকল্পে বাধা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি খনন প্রকল্প চালু রাখার দাবি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন খুলনার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বঙ্গোপসাগর থেকে পশুর চ্যানেলের প্রবেশমুখ পর্যন্ত ইতিমধ্যে খননকাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে মোংলা বন্দরের হাড়বাড়িয়া অঞ্চল পর্যন্ত ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসতে পারছে। এতে বন্দরের কার্যক্রম অনেক বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্দরের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম আরও বাড়াতে হাড়বাড়িয়া থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত খনন প্রকল্পটি ২০২০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরে জেটিতে সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটারের জাহাজ হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে।

সৈয়দ জাহিদ হোসেন আরও বলেন, মোংলা বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে পশুর চ্যানেল খনন প্রকল্পের বিকল্প নেই। বন্দর চ্যানেলের ইনারবারে খননকাজ বন্ধ হলে বন্দর অচল হয়ে যাবে এবং বন্দরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান ইপিজেড, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প ও মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল অচল হয়ে পড়বে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও সফলতা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন।

আরও পড়ুন

সৈয়দ জাহিদ হোসেন দাবি করেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বন্দরের উন্নয়নকাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পের ৩০০ একর জমিকে তিন ফসলি বলা হলেও সেখানে ১১৫ একর এক ফসলি জমি এবং ১৮৫ একর দুই ফসলি জমি। ওই এলাকায় কোনো পুকুর, জলাশয়, মাছের ঘের কিংবা বসতবাড়ি নেই। এতে প্রতীয়মান হয়, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের মদদ ও উসকানিতে বাণীশান্তা গ্রামের বাসিন্দারা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করছেন। অথচ যখন জমি দখলের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন তাঁরা কোনো আন্দোলন করেননি। তাঁরা মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

‘জমি দখলপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার মানুষ আন্দোলন করেছিলেন’ জানালে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ঝামেলা থাকলে তা মিটিয়ে ফেলতে হবে। যদি বিকল্প কিছু করার থাকে, সেটা করতে হবে। আমরা চাই, খননপ্রক্রিয়া যেন বন্ধ না হয়।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ওয়াহিদুজ্জামান, এন এস গুহ রায়, আবদুস সবুর, ক্যাপ্টেন শাহীন ইকবাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে কৃষিজমি রক্ষার দাবি জানানো এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, তাঁরা খননের বিপক্ষে নন। তবে খননের নামে তিন ফসলি জমি নষ্ট করে পরিবেশ ও জীবন-জীবিকা নষ্টের বিপক্ষে তাঁরা। এ জন্য বিকল্প জমিতে বালু ফেলার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, দুই বছর আগে থেকেই বাণীশান্তার কৃষক ও জনপ্রতিনিধিরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। অথচ বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্প রিভিউ করলেও কৃষক, জনপ্রতিনিধি ও গবেষকদের প্রস্তাব গোঁয়ার্তুমি করে প্রত্যাখ্যান করছে।