প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিশোরীকে ধর্ষণ, গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে মৃত্যু

মৃত্যু
প্রতীকী ছবি

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় ধর্ষণের শিকার অন্তঃসত্ত্বা এক কিশোরীর (১৬) গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ। এ ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানায় তিনজনকে আসামি করে গতকাল রোববার রাতে একটি হত্যা মামলা করেছেন ওই কিশোরীর দিনমজুর বাবা।

ওই কিশোরীর বাড়ি বাকেরগঞ্জের দুর্গাপাশা ইউনিয়নের একটি গ্রামে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।

কিশোরীর বাবা বলেন, তাঁর মেয়ে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার পথে তাকে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ইউনিয়নের ভাতশালা গ্রামের শাকিল গাজী (২৩) নামের এক তরুণ উত্ত্যক্ত করতেন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মাস চারেক আগে চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে তাঁরা বরিশালে গিয়েছিলেন। এ সময় বাড়িতে মেয়ে একাই ছিল। তখন শাকিল গাজী বাড়িতে এসে ওই কিশোরীকে বিয়ের কথা বলে ধর্ষণ করেন। এতে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

মেয়েটির বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, পরে বিষয়টি ওই কিশোরী শাকিলকে জানায়। এরপর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শাকিল তাঁর ভাবীর মাধ্যমে মেয়েটিকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালিশুরী বাজারের একটি ক্লিনিকে যান। ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন, সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এর পর থেকে শাকিল গাজী, তাঁর ভাবী ও বোন মিলে মেয়েটিকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দেন। পরে তাকে তাঁরা বিভিন্ন ওষুধ সেবন করান। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। রক্তক্ষরণ শুরু হলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পুনরায় কালিশুরীর ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানেই গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়।

মারা যাওয়া কিশোরীর মা বলেন, মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখে বেশ কয়েক দিন ধরে তার সন্দেহ হয়। অভাবের সংসার দেখে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেননি। এরপর মেয়ের কাছে জানতে চাইলে সে ঘটনা খুলে বলে। পরে শাকিল গাজীর কাছে জানতে চাইলে সেও অপরাধের কথা স্বীকার করেন। এ নিয়ে এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানালে তাঁরা শাকিলের বড় ভাই জাফর গাজী ও চাচাতো ভাই ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলামকে জানান। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনারা মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিলেন। তখন আমি পরিবারকে আগে মেয়েটিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এর বেশি কিছু আর জানি না।’

ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিক বলেন, ‘আমি শোনার পর মেয়েটিকে আগে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখন তো মেয়েটি মারাই গেল। আমি ঢাকায় আছি। ওর পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। আমি এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাদের বলেছি।’

আজ সোমবার ওই কিশোরীর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন বাকেরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় গতকাল রাতেই ওই কিশোরীর বাবা শাকিলসহ তিনজনকে আসামি করে থানরায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।