মির্জা ফখরুলের পদযাত্রায় যাওয়ার পথে লাকসামে বিএনপির গাড়িবহরে হামলা
কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। হামলার শিকার নেতা-কর্মীরা সবাই নোয়াখালীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পদযাত্রায় অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগের সহযোগী কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
হামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি মাইক্রোবাস। আজ শুক্রবার দুপুরে লাকসাম জংশন বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে নোয়াখালীতে বিএনপির মহাসচিবের পদযাত্রার কর্মসূচি ছিল। তিনি ফেনী হয়ে নোয়াখালী যান। কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুমিল্লা উত্তর জেলা ও মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ২০টি মাইক্রোবাসে করে লাকসাম হয়ে নোয়াখালী যাচ্ছিলেন। বেলা একটার দিকে তাঁরা লাকসাম জংশন বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের মাইক্রোবাসে হামলা করেন। তাঁরা ২০টি গাড়িতে ভাঙচুর করেন এবং নেতা-কর্মীদের পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেন। এতে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। এর মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
লাকসাম পৌরসভার মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল খায়ের, লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নিজাম উদ্দিন ও কান্দিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের নেতৃত্বে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা মোস্তাক মিয়া। এই নেতারা সবাই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ জুন রাতে লাকসাম পৌর এলাকায় ছাত্রলীগের তিনজন নেতাকে কুপিয়ে জখম করে ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এর মধ্যে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ইফতেখার অনিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার জেরে লাকসামে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের বাড়ি হামলা ও ভাঙচুর হয়। এ নিয়ে গত ২৬ জুন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম কথা বলেন। তাঁর বক্তব্যের পরদিন কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেখানে তাঁরা মির্জা ফখরুল মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেন।
লাকসাম আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আরও জানান, শুক্রবার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লাকসামের ওপর দিয়ে নোয়াখালীর কর্মসূচিতে যাবেন-এমন খবরে তাঁরা ফখরুলকে প্রতিহত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য তাঁরা সকাল থেকে কুমিল্লা-নোয়াখালী মহাসড়কের লাকসাম পৌরসভার সাতটি স্থানে জড়ো হন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে ফেনী দিয়ে নোয়াখালী যান। পরে ওই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য মুরাদনগর থেকে যে মাইক্রোবাসগুলো লাকসাম হয়ে যাচ্ছিল, সেগুলো আটকান আওয়ামী লীগপন্থী নেতা-কর্মীরা।
এই হামলায় মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন, কৃষক দলের আহ্বায়ক নায়েব আলী, মুরাদনগর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বশিরুল ইসলাম মোল্লা, কুমিল্লা উত্তর জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক বাদশাসহ ৫০ জন আহত হন বলে বিএনপি নেতারা দাবি করেন।
মোল্লা মুজিবুল হক বলেন, ‘নোয়াখালী যাওয়ার পথে লাকসামে হঠাৎ করে মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে সরকারদলীয় ক্যাডাররা। এ ঘটনায় আমাদের কর্মী দেলোয়ার আহত হন। এই খবর পেয়ে তাঁর বাবা আবুল কাশেম হার্ট ফেল করে মারা যান। আমরা এর বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে লাকসাম পৌরসভার মেয়র ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল খায়েরের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো তাজুল ইসলাম তাঁর ফেসবুক পেজে এ ঘটনা নিয়ে এক পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশে সকল দলের ও মতের রাজনীতি করার অধিকার আছে। শান্তিপূর্ণ লাকসামে যেমনিভাবে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে দেওয়া যাবে না, তেমনিভাবে লাকসামের ওপর দিয়ে আসা–যাওয়ার পথে অন্য কোনো দলের কাউকে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি অথবা কারও প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করা যাবে না। লাকসামের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে এসব বিষয় মেনে চলার জন্য আমি নির্দেশ করছি।’
এর আগে গত বছর মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার বাজারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলুর ওপর হামলা করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর অনুসারীরা।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, হামলার ঘটনা নিয়ে কেউ কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি। গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের কাছ থেকে শুনেছেন।