পাট জাগ দিতে ভোগান্তি

ফরিদপুরে অনেক কৃষক পাট কেটে অপরিষ্কার পানিতে জাগ দিচ্ছেন। এতে আঁশের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে।

পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। রাস্তার পাশে পাট কেটে ফেলে রাখা হয়েছে। গত শনিবার নগরকান্দার সলিথা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় পানিসংকটের কারণে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষক। অনেক স্থানে খেতেই পাট পুড়ে যাচ্ছে, লালচে হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক পাট কেটে অপরিষ্কার পানিতে জাগ দিচ্ছেন। এতে পাটের আঁশের রং কালচে হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মার্চের শেষে পাটের বীজ বপন করা হয়। পাট কাটা শুরু হয় জুনের শেষে। সাধারণত জুন মাসের শেষের দিকে খাল, বিল ও নালা বৃষ্টির পানিতে ভরে যায়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাত কম।

খাল, বিল ও নদ-নদীতে পানি কম। এ কারণে পাট জাগ দিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পাট জাগ দিতে প্রায় চার–পাঁচ হাত গভীর পানির প্রয়োজন হয়। পাট জাগ দিতে নসিমন বা ভ্যানে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার দূরে। এতে সময় ও খরচ বেশি হচ্ছে।

এদিকে গতকাল রোববার জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় পাট জাগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। ওই সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইসগেটগুলো অবিলম্বে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়কের পাশে যে খাদে পানি আছে, সেখানে পাট জাগ দেওয়ার উদ্যোগ নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) পাটের আবাদ হয়েছে ৮৫ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে। পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪০০ মেট্রিক টন।

সরেজমিন দেখা যায়, নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতী ইউনিয়নের পূর্ব চকবিলে কিছু কিছু অংশে হাঁটুপানি রয়েছে। তবে বিলের বেশির ভাগ জায়গায় পানি নেই। গত কয়েক দিনের তীব্র রোদে জন্য পানি শুকিয়ে গেছে। পাট কেটে সড়কের ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাটের গোড়ার দিকে আধা হাত পরিমাণ কালচে রং ধরেছে।

নগরকান্দার হিয়াবলদী গ্রামের কৃষক সরোয়ার মাতুব্বর (৫৭) বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। তিন বিঘা জমির পাট কেটেছেন ১৭-১৮ দিন আগে। অপেক্ষায় ছিলেন বৃষ্টির পানির। পরে বাধ্য হয়ে জমির পাট কেটে ফেলছেন। দেরিতে পাট কাটায় পাতা পুড়ে গেছে। আঁশের রং কালচে হয়ে যাবে। এতে পাটের ভালো দাম পাওয়া যাবে না।

সালথা উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের কৃষক চান মিয়া (৫২) বলেন, খেত থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি খালে নিয়ে যেতে হয়েছে পাট জাগ দেওয়ার জন্য। এতে মজুরি বাবদ ১৮ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী বলেন, পাট জাগ দেওয়া নিয়ে জেলার কৃষক বিপদে আছেন। বৃষ্টি নেই, নিচু জমিতে পানি নেই। খেতে পাট মরে যাচ্ছে। পাট নিয়ে লোকসানের মুখে রয়েছেন কৃষক।

পাট অধিদপ্তরের ফরিদপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মরিয়ম বেগম বলেন, পাট সহজে পচানোর জন্য ‘রিবন রেটিং পদ্ধতি’ চালু করা হয়েছিল। এ পদ্ধতিকে পাট কাটার পর ছাল আলাদা করে পচিয়ে নেওয়া হয়। এতে পানি কম লাগে। তবে কৃষক এ পদ্ধতি গ্রহণ করেননি।